পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
মৃণালিনী

সঙ্গ প্রায় ত্যাগ করিতেন না এ জন্য ব্যোমকেশ এ পর্য্যন্ত অবসর প্রাপ্ত হয় নাই।

 মৃণালিনীর ভর্ৎসনায় ব্যোমকেশ কহিল “কেন, হস্ত ত্যাগ করিব? আমি কি মনুষ্য নই? যদি একের মনোরঞ্জন করিয়াছ, তবে অপরের পার না?”

 মৃ। “দুর্ব্বৃত্ত! যদি না ছাড়িবে, তবে এখনই ডাকিয়া গৃহস্থ সকলকে উঠাইব।”

 ব্যো। “উঠাও। আমি কহিব অভিসারিকাকে ধরিআছি।”

 মৃ। “তবে অধঃপাতে যাও।” এই বলিয়া মৃণালিনী সবলে হস্তমোচন জন্য চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। ব্যোমকেশ কহিল, “অধীর হইও না। আমার মনোরথ পূর্ণ হইলেই আমি তোলায় ত্যাগ করিব। এখন তোমার সই ভগিনী মণিমালিনী কোথায়?”

 মৃ। “আমিই তোমার ভগিনী।”

 ব্যো। “তুমি আমার প্রাণেশ্বরী।”

 এই বলিয়া ব্যোমকেশ মৃণালিনীকে হস্তদ্বারা আকর্ষণ করিয়া লইয়া চলিলেন। যখন মাধবাচার্য্য তাঁহাকে হরণ করিয়াছিল, তখন মৃণালিনী স্ত্রীস্বভাবসুলভ চীৎকারে রতি দেখান্ নাই, এখনও শব্দ করিলেন না।

 অকস্মাৎ ব্যোমকেশ কাতর স্বরে বিকট চীৎকার করিয়া উঠিল। “রাক্ষসি! তোর দন্তে কি বিষ আছে?” এই বলিয়া ব্যোমকেশ মৃণালিনীর হস্ত ত্যাগ করিয়া আপন পৃষ্ঠে হস্ত মার্জ্জন করিতে লাগিলেন। স্পর্শানুভবে জানিলেন যে পৃষ্ঠ দিয়া দরদরিত রুধির পড়িতেছে।

 মৃণালিনী মুক্তহস্ত হইয়াও পলাইলেন না। তিনিও প্রথমে