পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গেশ্বর।
৫৩

কহিলেন, “মহারাজ! ব্রাহ্মণের বাচালতা মার্জ্জনা করিবেন। আপনি রাজনীতি বিশারদ, এক্ষণে ভূমণ্ডলে যত রাজগণ আছেন, সর্ব্বাপেক্ষা বহুদর্শী; প্রজাপালক; আপনিই আজন্ম রাজা। আপনার অবিদিত নাই যে শত্রুদমন রাজার প্রধান ধর্ম্ম। আপনিই প্রবল শত্রুদমনের কি উপায় করিয়াছেন?”

 রাজা কহিলেন, “কি অজ্ঞা করিতেছেন?” সকল কথা বর্ষীয়ান রাজার শ্রুতিসুলভ হয় নাই।

 মাধবাচার্য্যের পুনরুক্তির প্রতীক্ষা না করিয়া ধর্ম্মাধিকার পশুপতি কহিলেন, “মহারাজাধিরাজ! মাধবাচার্য্য রাজসমীপে জিজ্ঞাসু হইয়াছেন, যে রাজশত্রু দমনের কি উপায় হইয়াছে। বঙ্গেশ্বরের কোন্ শত্রু এ পর্যন্ত দমিত হয় নাই, তাহা এখনও আচার্য্য ব্যক্ত করেন নাই। তিনি সবিশেষ বাচন করুন।”

 মাধবাচার্য্য অল্প হাস্য করিয়া এবার অত্যুচ্চস্বরে কহিলেন, “মহারাজ, তুরকীয়েরা আর্য্যাবর্ত্ত প্রায় সমুদয় হস্তগত করিয়াছে। আপাততঃ তাহারা মগধ জয় করিয়া গৌড়রাজ্য আক্রমণের উদ্যোগে আছে।”

 এবার কথা রাজার কর্ণে প্রবেশ লাভ করিল। তিনি কহিলেন, “তুরকীদিগের কথা বলিতেছেন? তুরকীয়েরা কি আসিয়াছে?”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “ঈশ্বর রক্ষা করিতেছেন; এখনও তাহারা এখানে আসে নাই। কিন্তু আসিলে আপনি কি প্রকারে তাহাদিগের নিবারণ করিবেন?”

 রাজা কহিলেন, “আমি কি করিব—আমি কি করিব? আমার এই প্রাচীন শরীর, আমার যুদ্ধের উদ্যোগ সম্ভবে না। আমার এক্ষণে গঙ্গালাভ হইলেই হয়। তুরকীয়েরা আসে আসুক।”

ঙ৩