পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
মৃণালিনী।

 এবম্ভূত রাজবাক্য সমাপ্ত হইলে সভাস্থ সকলেই নীরব হইল। কেবল মহাসামন্তের কোষমধ্যস্থ অসি অকারণ ঈষৎ ঝনৎকার শব্দ করিল। অধিকাংশ শ্রোতৃবর্গের মুখে কোন ভাবই ব্যক্ত হইল না। মাধবাচার্য্যের চক্ষে একবিন্দু অশ্রুপাত হইল।

 সভাপণ্ডিত দামােদর প্রথমে কথা কহিলেন। “আচার্য্য, আপনি কি ক্ষুব্ধ হইলেন? যেরূপ রাজাজ্ঞা হইল, ইহা শাস্ত্র সঙ্গত। শাস্ত্রে ঋষিবাক্য প্রযুক্ত আছে, যে তুরকীয়েরা এ দেশ অধিকার করিবে। শাস্ত্রে আছে, অবশ্য ঘটিবে—কাহার সাধ্য নিবারণ করে? তবে যুদ্ধোদমে প্রয়ােজন কি?”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “ভাল সভাপণ্ডিত মহাশয়, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, আপনি এতদুক্তি কোন শাস্ত্রে দেখিয়াছেন?”

 দামােদর কহিলেন, “মৎস্যপুরাণে আছে যথা—”

 মাধ। “যথা থাকুক—মৎস্যপুরাণ আনিতে অনুমতি করুন; দেখান এরূপ উক্তি কোথায় আছে?”

 দামাে। “আমি বিস্মৃত হইয়াছিলাম, বিষ্ণুপুরাণে আছে।”

 মাধ। “বিষ্ণুপুরাণ আমি সমগ্র কণ্ঠস্থ বলিতেছি; দেখান এ কবিতা কোথায় আছে?”

 দামাে। “আমি কি এতই ভ্রান্ত হইলাম? ভাল স্মরণ করিয়া দেখুন দেখি, মানব ধর্ম্ম শাস্ত্রে একথা আছে কি না?”

 মাধ। “বঙ্গেশ্বরের সভাপতি মানব ধর্ম্ম শাস্ত্রের ও কি পারদর্শী নহেন?”

 দামাে। “কি জ্বালা! আপনি আমাকে বিহ্বল করিয়া তুলিলেন। আপনার সম্মুখে সরস্বতী বিমনা হয়েন, আমি