পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনী।

তিয়ার খিলিজির রঙ্গপ্রবেশের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। তখন বখ্‌তিয়ার খিলিজিও রঙ্গমধ্যে প্রবেশ করিয়া গজরাজের সম্মুখীন হইয়া দেখা দিলেন। যাহারা পূর্ব্বে তাঁহাকে চিনিত না, তাহারা তাঁহাকে দেখিয়া বিস্ময়াপন্ন হইল, অপিচ বিরক্ত হইল। তাঁহার শরীরে বীরলক্ষণ কিছুই ছিল না। তাঁহার দেহের আয়তন অতি ক্ষুদ্র, গঠন অতি কদর্য্য। শরীরের সকল স্থানই দোষবিশিষ্ট। তাঁহার বাহুযুগল বিশেষ কুরূপশালিত্বের কারণ হইয়াছিল। “আজানুলম্বিত বাহু” সুলক্ষণ হইলে হইতে পারে, কিন্তু দেখিতে কদর্য্য সন্দেহ নাই। বখ্‌তিয়ারের বাহুযুগল জানুর অধোভাগ পর্য্যন্ত লম্বিত সুতরাং আরণ্যনরের সহিত তাঁহার দৃশ্যগত সাদৃশ্য লক্ষিত হইত। তাঁহাকে দেখিয়া একজন মুসলমান আর একজনকে কহিল, “ইনিই বেহার জয় করিয়াছেন? এই শরীরে এত বল?”

 একজন অস্ত্রধারী হিন্দুযুবা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল। সে কহিল,

 “পবননন্দন হনু কলিকালে মর্কট রূপ ধারণ করিয়াছেন।”

 যবন কহিল, “তুই কি বলিস রে কাফের?”

 হিন্দু পুনরপি কহিল, “পবননন্দন কলিতে মর্কট রূপ ধারণ করিয়াছেন।”

 যবন কহিল, “আমি তোর কথা বুঝিতে পারিতেছি না, তুই তীর ধনু লইয়া এখানে আসিয়াছিস কেন?”

 হিন্দু কহিল, “আমি বাল্যকালে তীর ধনু লইয়া খেলা করিতাম। সেই অবধি অভ্যাস দোষে তীর ধনু আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে।”

 যবন কহিল, “হিন্দুদিগের সে অভ্যাস দোষ ক্রমে ঘুচি-