পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রঙ্গভূমি।

তেছে। এ খেলায় আর এখন কাফেরের সুখ নাই। সুভান এল্লা! একি?”

 এই বলিয়া যবন রঙ্গভূমি প্রতি অনিমেষ লোচনে চাহিয়া রহিল। বখ্‌তিয়ার নিজ দীর্ঘভুজে এক শাণিত কুঠার ধারণ করিয়া বারণরাজের সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন। কিন্তু বারণ তাঁহাকে লক্ষ্য না করিয়া, ইতস্ততঃ সমযোগ্য প্রতিযোগীর অন্বেষণ করিতে লাগিল। ক্ষুদ্রকায় একজন মনুষ্য যে তাহার রণাকাঙ্ক্ষী হইয়া দাঁড়াইয়াছে ইহা তাহার হস্তিবুদ্ধিতে উপজিল না। বখ্‌তিয়ার মাহুতকে অনুজ্ঞা করিলেন, যে হস্তীকে তাড়াইয়া আমার উপর দাও। মাহুত গজশরীরে চরণাঙ্গুলি সঞ্চালন দ্বারা সঙ্কেত করিয়া বখ্‌তিয়ারকে দেখাইয়া দিল। তখন হস্তী ঊর্দ্ধশুণ্ডে বখ্‌তিয়ারকে আক্রমণ করিল। বখ্‌তিয়ার নিমেষ মধ্যে করিশুণ্ডপ্রক্ষেপ হইতে ব্যবহিত হইয়া শুণ্ডোপরে তীব্র কুঠারাঘাত করিল। যূথপতি ব্যথায় ভীষণ চীৎকার করিয়া উঠিল। এবং ক্রোধে পতনশীল পর্ব্বতবৎ বেগে প্রহারকারীর প্রতি ধাবমান হইল; কুঠারাঘাতে সে বেগ রোধের কোন সম্ভাবনা রহিল না। দ্রষ্টৃবর্গ সকলে দেখিল, যে পলকমধ্যে বখ্‌তিয়ার কর্দ্দম পিণ্ডবৎ দলিত হইবেন। সকলে বাহূত্তোলন করিয়া “পলাও পলাও” শব্দ করিতে লাগিল। কিন্তু বখ্‌তিয়ার মগধ জয় করিয়া আসিয়া রঙ্গভূমে পলায়নতৎপর হইবেন কি প্রকারে? তিনি, তদপেক্ষা মৃত্যু শ্রেয়ঃ বিবেচনা করিয়া হস্তি-পদতলে প্রাণত্যাগ মনে মনে স্বীকার করিলেন।

 করিরাজ আত্মবেগভরে তাঁহার পৃষ্ঠের উপরে আসিয়া পড়িয়াছিল; একেবারে বখ্‌তিয়ারকে দলিত করিবার মানসে, নিজ বিশাল চরণ উত্তোলন করিল কিন্তু তাহা বখ্‌তিয়ারের স্কন্ধে স্থাপিত হইতে না হইতেই ক্ষয়িতমূল অট্টালিকার ন্যায়, সশব্দে

ক৩