পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পশুপতি।
৭৭

 প। “শ্রবণ করুন। আমি এক্ষণে প্রকৃত বঙ্গের ঈশ্বর, কিন্তু লোকে আমাকে বঙ্গেশ্বর বলে না। আমি স্বনামে রাজা হইতে বাসনা করি। সেন বংশ লোপ হইয়া পশুপতি বঙ্গাধিপতি হউক।”

 ম। “তাহাতে আমাদিগের কি উপকার করিলেন? আমাদিগকে কি দিবেন?”

 প। “রাজকর মাত্র। মুসলমানের অধীনে করপ্রদ মাত্র রাজা হইব।”

 ম। “ভাল; আপনি যদি প্রকৃত বঙ্গেশ্বর, রাজ্য যদি আপনার এরূপ করতলস্থ, তবে আমাদিগের সহিত আপনার কথা বার্ত্তার আবশ্যক কি? আমাদিগের সাহায্যের প্রয়োজন কি? আমাদিগকে কর দিবেন কেন?”

 প। “তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিব। ইহাতে কপটতা করিব না। প্রথমতঃ সেনরাজা আমার প্রভু; বয়সে বৃদ্ধ, আমাকে স্নেহ করেন। স্ববলে যদি আমি তাঁহাকে রাজ্যচ্যুত করি—তবে অত্যন্ত লোকনিন্দা। আপনারা কিঞ্চিন্মাত্র যুদ্ধোদ্যম দেখাইয়া, আমার আনুকূল্যে বিনা যুদ্ধে রাজধানী প্রবেশ পূর্ব্বক তাঁহাকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া আমাকে তদুপরি স্থাপিত করিলে সে নিন্দা হইবে না। দ্বিতীয়তঃ রাজ্য অনধিকারীর অধিকারগত হইলেই বিদ্রোহের সম্ভাবনা, আপনাদিগের সাহায্যে সে বিদ্রোহ সহজেই নিবারণ করিতে পারিব। তৃতীয়তঃ আমি স্বয়ং রাজা হইলে এক্ষণে সেন রাজার সহিত আপনাদিগের যে সম্বন্ধ, আমার সঙ্গেও সেই সম্বন্ধ থাকিবে। আপনাদিগের সহিত যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকিবে। যুদ্ধে আমি প্রস্তুত আছি—কিন্তু জয় পরাজয় দুইয়ের সম্ভাবনা। জয় হইলে আমার নূতন লাভ কিছুই হইবে না কিন্তু পরাজয়ে সর্বস্ব হানি। কিন্তু আপনা-

ছ৩