পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
মৃণালিনী।

দিগের সহিত সন্ধি করিয়া রাজ্য গ্রহণ করিলে সে আশঙ্কা থাকিবে না। বিশেষতঃ সর্ব্বদা যুদ্ধোদ্যত থাকিতে হইলে নুতন রাজ সুশাসিত হয় না।”

 ম। “আপনি রাজনীতিজ্ঞের ন্যায় বিবেচনা করিয়াছেন। আপনার কথায় আমার সম্পূর্ণ প্রত্যয় জন্মিল। আমিও এইরূপ স্পষ্ট করিয়া খিলিজি সাহেবের অভিপ্রায় ব্যক্ত করি। তিনি এক্ষণে অনেক চিন্তায় ব্যস্ত আছেন যথার্থ—কিন্তু হিন্দুস্থানে যবনরাজ একেশ্বর হইবেন, অন্য রাজার নাম মাত্র আমরা রাখিব না। কিন্তু আপনাকে বঙ্গে শাসন কর্ত্তা করিব। যেমন দিল্লীতে মহম্মদ ঘোরির প্রতিনিধি কুতুবউদ্দীন, যেমন পূর্ব্বদেশে কুতুবউদ্দীনের প্রতিনিধি বখ‍্তিয়ার খিলিজি, তেমনি বঙ্গে আপনি বখ‍্তিয়ারের প্রতিনিধি হইবেন। আপনি ইহাতে স্বীকৃত আছেন কিনা?”

 পশুপতি কহিলেন, “আমি ইহাতে সম্মত হইলাম।”

 ম। “ভাল; কিন্তু আমার আর এক কথা জিজ্ঞাস্য আছে। আপনি যাহা অঙ্গীকার করিতেছেন তাহা সাধন করিতে আপনার ক্ষমতা কি?”

 প। “আমার অনুমতি ব্যতীত একটী পদাতিও যুদ্ধ করিবে না। রাজকোষ আমার অনুচরের হস্তে। আমার আদেশ ব্যতীত যুদ্ধোদ্যোগে একটী কপর্দ্দকও ব্যয়িত হইবে না। পঞ্চজন অনুচর লইয়া খিলিজিকে রাজপুর প্রবেশ করিতে বলিও; কেহ জিজ্ঞাসা করিবে না ‘কে তোমরা?”

 ম। “আরও এক কথা বাকি আছে। এই দেশে যবনের পরম শত্রু হেমচন্দ্র বাস করিতেছে। অদ্য রাত্রেই তাহার মুণ্ড যবন শিবিরে প্রেরণ করিতে হইবে।”