পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মােহিতা।
৮৭

 প। “আত্মকার্য্যই বল। রাজকার্য্যই হউক আর আত্মকার্য্যই হউক আমি কবে না ব্যস্ত থাকি? তুমি আজি জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন?”

 ম।”আমি সকল শুনিয়াছি।”

 প। “কি শুনিয়াছ?”

 ম। “যবনের সহিত পশুপতির মন্ত্রণা—শান্তশীলের সহিত মন্ত্রণা—দ্বার পার্শ্বে থাকিয়া সকল শুনিয়াছি।”

 পশুপতির মুখমণ্ডল যেন মেঘান্ধকারে ব্যাপ্ত হইল। তিনি বহুক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকিয়া কহিলেন।

 “ভালই হইয়াছে। সকল কথাই আমি তোমাকে বলিতাম—না হয় তুমি আগে শুনিয়াছ। তুমি কোন্ কথা না জান?”

 ম। “পশুপতি, তুমি আমাকে ত্যাগ করিলে?”

 প। “কেন, মনোরমে? তোমার জন্যই আমি এ মন্ত্রণা করিয়াছি। আমি এক্ষণে রাজভৃত্য, ইচ্ছামত কার্য্য করিতে পারি না। এখন বিধবাবিবাহ করিলে জনসমাজে পরিত্যক্ত হইব কিন্তু যখন আমি স্বয়ং রাজা হইব তখন কে আমায় ত্যাগ করিবে? যেমন বল্লাল সেন কৌলীন্যের নূতন পদ্ধতি প্রচলিত করিয়াছিলেন, আমি সেইরূপ বিধবার পরিণয়ের নূতন পদ্ধতি প্রচলিত করিব।”

 মনোরম দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “পশুপতি, সে সকল আমার পক্ষে স্বপ্ন মাত্র। তুমি রাজা হইলে, আমার সে স্বপ্ন ভঙ্গ হইবে। আমি কখন তোমার মহিষী হইব না।”

 প। “কেন, মনোরমে?”

 ম। “কেন? তুমি রাজ্যভার গ্রহণ করিলে আর কি আমায় ভাল বাসিবে? রাজ্যই তোমার হৃদয়ে প্রধান স্থান লাভ করিবে।—তখন আমার প্রতি তোমার হতাদর হইবে। তুমি