পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
মৃণালিনী।

বিদ্ধ হইল। সেই আঘাত প্রাপ্তি মাত্র সে রমণীয় ঘোটক মুমূর্ষু হইয়া ভূতলে পড়িল।

 সুশিক্ষিতের ন্যায় হেমচন্দ্র পতনশীল অশ্ব হইতে লম্ফদিয়া ভূতলে দাঁড়াইলেন। এবং পলক মধ্যে নিজকরস্থ করাল শূল উন্নত করিয়া কহিলেন, “আমার পিতৃদত্ত শূল শত্রুরক্ত পান না করিয়া কখন আমার হস্ত ত্যাগ করে নাই।” তাঁহার এই কথা সমাপ্ত হইতে না হইতে তদগ্রে বিদ্ধ হইয়া দ্বিতীয় অশ্বারোহী ভূতলে পতিত হইল।

 ইহা দেখিয়া তৃতীয় অশ্বারোহী অশ্বের মুখ ফিরাইয়া বেগে পলায়ন করিল। সেই শান্তশীল।

 হেমচন্দ্র তখন অবকাশ পাইয়া নিজস্কন্ধবিদ্ধ তীর মোচন করিলেন। তীর কিছু অধিক মাংসভেদ করিয়াছিল—মোচন মাত্র অতিশয় শোণিত স্রুতি হইতে লাগিল। হেমচন্দ্র নিজপরিধান বস্ত্র দ্বারা তাহার নিবারণ চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহা নিষ্ফল হইল। ক্রমে হেমচন্দ্র রক্তক্ষতি হেতু দুর্ব্বল হইতে লাগিলেন। তখন বুঝিলেন, যে যবনশিবিরে গমনের অদ্য আর কোন সম্ভাবনা নাই। অশ্ব হত হইয়াছে—নিজবল হত হইতেছে। অতএব অপ্রসন্ন মনে, ধীরে ধীরে, নগরাভিমুখে প্রত্যাবর্ত্তন করিতে লাগিলেন।

 হেমচন্দ্র প্রান্তর পার হইলেন। তখন শরীর নিতান্ত অবশ হইয়া আসিল—শোণিত-স্রোতে সর্ব্বাঙ্গ আর্দ্র হইল; গতিশক্তি রহিত হইয়া আসিতে লাগিল। কষ্টে নগরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। আর যাইতে পারেন না। এক কুটীরনিকটে বটবৃক্ষতলে উপবেশন করিলেন। তখন রজনী প্রভাত হইয়াছে। রাত্রি জাগরণ—সমস্ত রাত্রের পরিশ্রম—রক্তস্রাবে বলহানি— হেমচন্দ্রের চক্ষে পৃথিবী ঘূরিতে লাগিল। তিনি বৃক্ষমূলে পৃষ্ঠ