পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতিথিসৎকার।
৯৫

বিচিত্র শিক্ষা কৌশলে করস্থ শূলান্দোলন দ্বারা তীরত্রয়ের এক কালীন নিবারণ করিলেন।

 অশ্বারোহিগণ পুনর্ব্বার একেবারে শরসংযোগ করিল। এবং তাহা নিবারিত হইতে না হইতেই পুনর্ব্বার শরত্রয় ত্যাগ করিল।

 এই রূপ অবিরত হস্তে হেমচন্দ্রের উপর বাণক্ষেপ করিতে লাগিল। হেমচন্দ্র তখন বিচিত্র রত্নাদি মণ্ডিত চর্ম্ম হস্তে লইলেন, এবং তৎসঞ্চালন দ্বারা অবলীলাক্রমে সেই শরজাল বর্ষণ নিরাকরণ করিতে লাগিলেন; কদাচিৎ দুই এক শর অশ্ব শরীরে বিদ্ধ হইল মাত্র। স্বয়ং অক্ষত রহিলেন।

 বিস্মিত হইয়া অশ্বারোহিত্রয় নিরস্ত হইল। পরস্পরে কি পরামর্শ করিতে লাগিল। হেমচন্দ্র সেই অবকাশে তৎপ্রতি এক তীরত্যাগ করিলেন। যে শরবেধে কুতব-উদ্দীনের মত্তহস্তী ভূমিশায়ী হইয়াছিল, সেই জাতীয় বিশাল শরত্যাগ করিলেন। সে অব্যর্থ সন্ধান। শর, এক জন অশ্বারোহীর ললাট মধ্যে বিদ্ধ হইল। সে অমনি অশ্বপৃষ্ঠচ্যুত হইয়া ধরাতলশায়িত হইল।

 তৎক্ষণাৎ অপর দুই জনে অশ্বে কষাঘাত করিয়া, শূল যুগল প্রণত করিয়া হেমচন্দ্রের প্রতি ধাবমান হইল। এবং শূলক্ষেপ যোগ্য নৈকট্য প্রাপ্ত হইলে শূলক্ষেপ করিল। যদি তাহারা হেমচন্দ্রকে লক্ষ্য করিয়া শূলত্যাগ করিত, তবে হেমচন্দ্রের বিচিত্র শিক্ষায় তাহা নিবারিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু তাহা না করিয়া আক্রমণ কারীরা হেমচন্দ্রের অশ্ব প্রতি লক্ষ্য করিয়া শূল ত্যাগ করিয়াছিল। তত দূর অধঃপর্য্যন্ত হস্ত সঞ্চালনে হেমচন্দ্রের বিলম্ব হইল। একের শূল নিবারিত হইল। অপরের সন্ধান নিবারিত হইল না। শূল অশ্বের গ্রীবাতলে