পাতা:মেঘনাদবধ কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৪০).pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মেঘনাদবধ কাব্য: ভূমিকা
৷৶৹

মুদ্রিত হইয়াছিল। হেমচন্দ্রের এই “মুখবন্ধ” পরবর্ত্তী কালে চতুর্থ সংস্করণ হইতে আমূল পরিবর্ত্তিত হইয়া “ভূমিকা” নামে প্রকাশিত হয়; এই পরিবর্ত্তনের তারিখ ১৩ই আশ্বিন ১২৭৪ সাল (২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৬৭)। বর্ত্তমান সংস্করণে এই “ভূমিকা” মুদ্রিত হইয়াছে। “মুখবন্ধে” হেমচন্দ্র যাহা লিখিয়াছিলেন, তাহা হইতে ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র লোকপ্রিয়তা বুঝা যায়। কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি—

 পুত্র মুখাবলোকন কবিলে নবপ্রসূতা স্ত্রীর যেরূপ সুখোদ্বোধ হয়, গ্রন্থ সম্পূর্ণ হইলে গ্রন্থকর্ত্তারও তাদৃশ আনদোদ্ভব হইয়া থাকে; আর যেমন সেই শিশুসন্তান বাল্যনিবন্ধন রোগ পীড়া অতিক্রম কবিয়া যৌবন প্রাপ্ত ও যশস্বী হইলে মার আর আনন্দের সীমা থাকে না, লব্ধপ্রতিষ্ঠ গ্রন্থমালা সন্দর্শনে গ্রন্থকর্ত্তাও যার পর নাই সুখী হন। কোন সহৃদয় ব্যক্তি আজি মেঘনাদবধ কাব্য রচয়িতার অপ্রমেয় সন্তৃপ্তি অনুভব করিতে না পারেন? অমিত্রাক্ষর ছন্দে কবিতা রচনা করিয়া কেহ যে এত অল্পকালের মধ্যে এই অস্ত্যযমকপ্লাবিত দেশে এমন ব্যাপক যশোলাভ করিবে এ কথা কাব মনে ছিল? কিন্তু কে না স্বীকার কবিবে যে সেই অসম্ভাবিত ফল আজি মাইকেল মধুসুদনের জন্য ফলিয়াছে। বৎসরেক মাত্র হইল এই গ্রন্থ প্রথমবার মুদ্রিত হয় কিন্তু অতি অল্পকালের মধ্যেই ১০০০ খণ্ড পুস্তক পর্যবসিত হইয়া দ্বিতীয়বার মুদ্রাঙ্কনের প্রয়োজন হইয়াছে। প্রথমে কতলোক কতই বলিয়াছিল—কতই ভয় দেখাইয়াছিল—কতই নিন্দা করিয়াছিল; এমন কি, লেখক স্বয়ং একমাস পূর্ব্বে গ্রন্থকারের রচনা পাঠ করে নাই। কিন্তু সে দিন আর নাই।

 মধুসূদন ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করেন। ১৮৬২ হইতে ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে এই কাব্যের আর সংস্করণ না হইবার কারণ সম্ভবতঃ কবির অনুপস্থিতি। তাঁহার কলিকাতায় পদার্পণের ছয় মাসের মধ্যেই তৃতীয় সংস্করণ ১ম খণ্ড প্রকাশিত হয় (২১ আগস্ট ১৮৬৭); পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১৪৮। এই সংস্করণের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হইয়াছিল কি না জানা যায় না; সম্ভবতঃ প্রকাশিত হয় নাই। চতুর্থ ও পঞ্চম সংস্করণেরও মাত্র প্রথম খণ্ড বাহির হইয়াছিল। চতুর্থ সংস্করণ বাহির হয় ৩রা ডিসেম্বর ১৮৬৭ (পৃ. ১৭২) এবং পঞ্চম সংস্করণ বাহির হয় ১৬ মার্চ ১৮৬৯ (পৃ. ১৭২)। হেমচন্দ্রের পরিবর্ত্তিত