আমার মাথার দিব্যি রইল ভাই, আজ থেকে আমাকে তোর সেই মরা মা ব’লে মনে করবি।
যথাসময়ে সমস্ত কথা কাদম্বিনীর কানো গেল। তিনি নিজের বাড়ি হইতে মেজবৌকে ডাক দিয়া বলিলেন, ভাইকে আমি খাওয়াতে পারি। নে যে, তুমি অত কথা তাকে গায়ে পড়ে বলতে গেছ?
কথার ধরণ দেখিয়া হেমাঙ্গিনীর গা জ্বালা করিয়া উঠিল। কিন্তু সে ভাব গোপন করিয়া বলিলেন, যদি গায়ে পড়েই ব’লে থাকি, তাতেই বা দোষ কি?
কাদম্বিনী প্রশ্ন করিলেন, তোমার ছেলেটিকে ডেকে এনে আমি যদি এমনি করে বলি, তোমার মানটি থাকে কোথায় শুনি? তুমি এমন করে ‘নাই' দিলে আমি তাকে শাসন করি কি করে বল দেখি?
হেমাঙ্গিনী আর সহ্য করিতে পারিলেন না। বলিলেন, দিদি, পনের-ষোল বছর এক সঙ্গে ঘর করাচি-তোমাকে আমি চিনি। পেটে মেরে আগে তোমার নিজের ছেলেকে শাসন কর, তার পরে পরের ছেলেকে করে, তখন গায়ে পড়ে কথা কইতে যাবো না।
কাদম্বিনী অবাক হইয়া বলিলেন, আমার পাঁচুগোপালের সঙ্গে ওর তুলনা? দেবতার সঙ্গে বাঁদরের তুলনা? এর পরে আরও কি যে তুমি বলে বেড়াবে, তাই ভাবি মেজবৌ।
মেজবৌ উত্তর দিলেন, কে দেবতা কে বাঁদর, সে আমি জানি। কিন্তু আর আমি কিছুই বলব, না দিদি, যদি বলিত এই যে-তোমার মত নিষ্ঠুর, তোমার মত বেহায়া মেয়েমানুষ আর সংসার নেই। বলিয়া তিনি প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করিয়াই জানালা বন্ধ করিয়া দিলেন।
সেইদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে অর্থাৎ কর্তারা ঘরে ফিরিবার সময়টিতে বড়বৌ নিজের উঠানে দাঁড়াইয়া দাসীকে উপলক্ষ্য করিয়া উচ্চকণ্ঠে অর্জন-গর্জন আরম্ভ করিয়া দিলেন-যিনি রাত-দিন কচ্ছেন, তিনিই এর বিহিত করবেন। আমার ভায়ের মর্ম আমি বুঝি নে, বোঝে পরে। কখ্খনো ভাল হবে না-