ভাই-বোনে ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখলে ধর্ম সইবেন না। -তা বলে দিচ্ছি, বলিয়া তিনি রান্নাঘরে গিয়া ঢুকিলেন।
উভয় জায়ের মধ্যে এই ধরনের গালি-গালাজ, শাপ-শাপান্ত অনেকবার অনেক রকম করিয়া হইয়া গিয়াছে, কিন্তু আজ ঝাঁজটা কিছু বেশী। অনেক সময় হেমাঙ্গিনী শুনিয়াও শুনিতেন না, বুঝিয়াও গায়ে মাখিতেন না; কিন্তু আজ নাকি তাঁহার দেহটা খারাপ ছিল, তাই উঠিয়া আসিয়া জানালায় দাঁড়াইয়া কহিলেন, এর মধ্যেই চুপ করলে কেন দিদি? ভগবান হয়ত শুনতে পাননি-আর খানিকক্ষণ ধরে আর সর্বনাশ কানা কর- বট্ঠাকুর ঘরে আসুন, তিনি শুনুন, ইনি ঘরে এসে শুনুন-এরই মধ্যেই হাঁপিয়ে পড়লে চলবে কেন?
কাদম্বিনী উঠানের উপড়ে ছুটিয়া আসিয়া মুখ উঁচু করিয়া চেঁচাইয়া উঠিলেন, আমি কি কোন সর্বনাশীর নাম মুখে এনেছি?
হেমাঙ্গিনী স্থিরভাবে জবাব ‘দিলেন, মুখে আনবে কেন দিদি, মুখে আনবার পাত্রী নাও। কি তুমি কি ঠাওরাও, একা তুমিই সেয়ানা আর পৃথিবীসুদ্ধ সেয়ানা আর পৃথিবীসুদ্ধ ন্যাকা? ঠেস দিয়ে কার কপাল ভাঙচ, সে কি কেউ টের পায় না?
কাদম্বিনী এবার নিজমূর্ত্তি ধরিলেন। মুখ ভ্যাংচাইয়া হাত-পা নাড়িয়া বলিলেন, টের পেলেই বা। যে দোষে থাকবে, তারই গায়ে লাগবে। আর একা তুমিই টের পাও, আমি পাই নে? কেষ্ট যখন এলো, সাত চড়ে রা করত না, যা বলতুম, মুখ বুজে তাই করত-আজি দুপুরবেলা কার জোরে কি জবাব দিয়ে গেল, জিজ্ঞাসা করে দ্যাখো এই প্রসন্নার মাকে,—বলিয়া দাসীকে দেখাইয়া দিল।
প্রসন্নর মা কহিল, সে-কথা সত্য মেজবৌমা। আজ সে ভাত ফেলে উঠে যেতে মা বললেন, এ পিণ্ডিই না গিললে যখন যমের বাড়ি যেতে হবে, তখন এত তেজ কিসের জন্যে? সে বলে গেল,—আমার মেজদি থাকতে কাউকে ভয় করি নে।
কাদম্বিনী সদর্পে বলিলেন, কেমন হ’ল তা। কার জোরে এত তেজ
১৮