অবগত হইয়া ক্রোধভরে স্ত্রীর ঘরে ঢুকিতেছিলেন, উমা কাছে আসিয়া ফিস্ফিস্ করিয়া বলিল, মা জ্বরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।
বিপিন চমকাইয়া উঠিলেন, সে কি রে আজ তিন-চারদিন জ্বর ছিল না ত!
বিপিন মনে মনে স্ত্রীকে অতিশয় ভালবাসিতেন। কত যে বাসিতেন তাহা বছর চার-পাঁচ পূর্বে দাদাদের সহিত পৃথক হইবার সময় জানা গিয়াছিল। ব্যকুল হইয়া ঘরে ঢুকিয়াই দেখিলেন, তখনও তিনি মাটিব উপর পড়িয়া আছেন। ব্যস্ত হইয়া শয্যায় তুলিবার জন্য গায়ে হাত দিতেই হেমাঙ্গিনী চোখ মেলিয়া, একমুহূর্ত স্বামীর মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া, অকস্মাৎ দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন-কেষ্টকে আশ্রয় দাও, নইলে এ জ্বর আমার সারবে না। মা দূর্গা আমাকে কিছুতেই মাপ করবেন না।
বিপিন পা ছাড়াইয়া লইয়া, কাছে বসিয়া স্ত্রীর মাথায় হাত বুলাইয়া সান্ত্বনা দিতে লাগিলেন।
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, দেবে?
বিপিন সজল চক্ষু হাত দিয়া মুছিয়া বলিলেন, তুমি যা চাও তাই হবে, তুমি ভাল হয়ে ওঠ।
হেমাঙ্গিনী আর কিছু বলিলেন না, বিছানায় উঠিয়া শুইয়া পড়িলেন।
জ্বর রাত্রেই ছাড়িয়া গেল, পরদিন সকালে উঠিয়া বিপিন ইহা লক্ষ্য করিয়া পরম আহ্নলাদিত হইলেন। হাত-মুখ ধুইয়া কিছু জলযোগ করিয়া দোকানে বাহির হইতে ছিলেন, হেমাঙ্গিনী আসিয়া বলিলেন, মার খেয়ে কেষ্টর ভারী জ্বর হয়েছে, তাকে আমি আমার কাছে নিয়ে আসচি।
বিপিন মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া বলিলেন, তাকে এ-বাড়িভে। আনবার দরকার কি? যেখানে আছে সেখানেই থাক না।
হেমাঙ্গিনী ক্ষণকাল স্তম্ভিত হইয়া থাকিয়া বলিলেন, কাল রাত্রে, যে তুমি কথা দিলে আশ্রয় দেবে?
৩৮