বিপিন অবজ্ঞাভরে মাথা নাড়িয়া বলিলেন, হাঁ-সে কে যে, তাকে ঘরে এনে পুষতে হবে! তুমিও যেমন?
কাল রাত্রে স্ত্রীকে অত্যন্ত অসুস্থ দেখিয়া যাহা স্বীকার করিয়াছিলেন, আজ সকালে তাহাকে সুস্থ দেখিয়া তুচ্ছ করিয়া দিলেন। ছাতাটা বগলে চাপিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, পাগলামি ক’র না, -দাদারা ভারী চটে যাবেন।
হেমাঙ্গিনী শান্ত দৃঢ়কণ্ঠে কহিলেন, দাদারা চটে গিয়ে কি তাকে খুন করে ফেলতে পারেন, না, আমি নিয়ে এলে সংসারে কেউ তাকে আটকে রাখতে পাবে? আমাব দুটি সন্তান ছিল, কাল থেকে তিনটি হয়েছে। আমি কেষ্টব মা?
আচ্ছা, সে তখন দেখা যাবে, বলিয়া বিপিন চলিয়া যাইতেছিল, হেমাঙ্গিনী সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, এ-বাড়িতে তাকে আনতে দেবে না?
সর, সর-কি পাগলামি কর? বলিয়া বিপিন চোখ রাঙাইয়া চলিয়া গেলেন।
হেমাঙ্গিনী ডাকিলেন, শিবু, একটা গরুর গাড়ি আন, আমি বাপের বাড়ি যাব।
বিপিন শুনিতে পাইয়া মনে মনে হাসিয়া বলিলেন, ইস। ভয় দেখানো হচ্ছে! তারপর দোকানে চলিয়া গেলেন।
কেষ্ট চণ্ডীমণ্ডপের একাধারে ছেঁড়া মাদুরের উপর জ্বরে, গায়ের ব্যথায় এবং বোধ করি বুকের ব্যথায় আচ্ছন্নের মত পড়িয়া ছিল। হেমাঙ্গিনী ডাকিলেন, কেষ্ট!
কেষ্ট ষেন প্রস্তুত হইয়া ছিল-এইবারে তাড়াক্ করিয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, মেজদি। পরীক্ষণে সলজ্জ হাসিতে তাহার সমস্ত মুখ ভরিয়া গেল। যেন তাহার কোন অসুখ-বিসুখ নাই, এইভাবে মহাউৎসাহে উঠিয়া দাঁড়াইয়া, কোঁচা দিয়া ছেঁড়া আদুর ঝাড়িতে ঝাড়িতে বলিল, ব’স।
হেমাঙ্গিনী তাহার হাত ধরিয়া বুকের কাছে টানিয়া আনিয়া বলিলেন, আর ত বসব না। দাদা, আয় আমার সঙ্গে। আমাকে বাপের বাড়ি আজ তোকে পৌঁছে দিতে হবে যে।
৩৯