ডাকচেন?
মা ডাকছেন।
তুমি কে?
আমি বাড়ির চাকর।
বিজ্লী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, আমাকে নয়, তুমি আবার জিজ্ঞাসা করে এসো।
বালক খানিক পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আপনার নাম বিজ্লী ত? আপনাকেই ডাকচেন,—আসুন আমার সঙ্গে, মা দাঁড়িয়ে আছেন।
চল, বলিয়া বিজ্লী তাড়াতাড়ি পায়ের ঘুঙুর খুলিয়া ফেলিয়া তাহাকে অনুসরণ করিয়া অন্দরে আসিয়া প্রবেশ করিল। মনে করিল, গৃহিণীর বিশেষ কিছু ফরমায়েস আছে, তাই আহবান।
শোবার ঘরের দরজার কাছে রাধারাণী ছেলে কোলে করিয়া দাঁড়াইয়াছিল। ত্রস্ত কুষ্ঠিত-পদে বিজ্লী সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইবামাত্র সে সম্রামে হাত ধরিয়া ভিতরে টানিয়া আনিল; একটা চৌকির উপর জোর করিয়া বসাইয়া হাসিমুখে কহিল, দিদি, চিনতে পার?
বিজ্লী বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া রহিল। রাধারাণী কোলের ছেলেকে দেখাইয়া বলিল, ছোট বোনকে না হয় না চিনলে দিদি, সে দুঃখ করি নে; কিন্তু এটাকে না চিনতে পারলে সত্যিই ভারী ঝগড়া করব। বলিয়া মুখ টিপিয়া মৃদু হাসিতে লাগিল।
এমন হাসি দেখিয়াও বিজ্লী তথাপি কথা কহিতে পারিল না। কিন্তু তাহার আঁধার আকাশ ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হইয়া আসিতে লাগিল। সেই অনিন্দ্যসুন্দর মাতৃমুখ হইতে সদ্যবিকশিত গোলাপ-সদৃশ শিশুর মুখের প্রতি তাহার দৃষ্টি নিবদ্ধ হইয়া রহিল। রাধারাণী নিস্তব্ধ। বিজ্লী নির্নিমেষ-চক্ষে চাহিয়া চাহিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া দুই হাত প্রসারিত করিয়া শিশুকে কোলে টানিয়া লইয়া সজোরে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ঝরঝর করিয়া কাঁদিয়া ফেলিল।
রাধারাণী কহিল, চিনেচ দিদি?
৬২