“বৈশাখ মাসেতে গাছে আমের কড়ি[১]।
পুষ্প ফুটে পুষ্পডালে ভ্রমর গুঞ্জরি॥
ফুলদোলে পূজা আদি কহিতে বিস্তর।
আর বার পত্র আসে মায়ের গোচর॥
পিতাপুত্র দুইজন বন্দী পরবাসে।
মায়ের চক্ষের জলে বসুমাতা ভাসে॥
অভাগী কমলা কালে শয্যা ভাসাইয়া।
কেমনে বাচিব প্রাণ শানে বান্ধ। হিয়া॥
কোন বা দেবেরে পূজলে বাপ-ভাইয়ে পাব।
মায়ের ঝিয়ের দুঃখের কথা কার কাছে কইব॥
ঘরে আছে কাল সাপ যমের দোসর।
তার কাছে যাইতে দেখ মনে হইল ডর॥
মায় গিয়া ধন্বা[২] দিলাম চণ্ডীর দুয়ারে।
তার পরের কথা কহি সভার গোচরে॥
“জ্যৈষ্ঠ মাসেতে দেখ পাক। গাছের ফল।
রাত্রিদিবা না শুকায় নয়নের জল॥
মায়ে করে ষষ্ঠীপূজা পুতের লাগিয়া।
প্রাণের ভাই বিদেশে মোর দুঃখে কান্দে হিয়া॥
মায়ের স্নেহের ডুঙ্গা[৩] পড়িয়া রহিল।
পুত্রেরে ডাকিয়া মায় বিলাপ জুড়িল॥
এক হস্তে মোছি আমি চক্ষের যে পানি।
সান্ত্বনা করিয়া ঘরে লইত জননী॥
“এমন সময় দুই কারকুন কি কাম করিল।
রাজার সনদ লইয়া অন্দরে ঢুকিল॥
এহিত সনদে আমি সাক্ষী করি যাই।
বিদেশে হইয়াছে বন্দী বাপ আর ভাই॥
পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৮
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
মৈমনসিংহ-গীতিকা