পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কমলা
১৫৯

নিজেরে বাসেতে বন্দী হইলাম পরবাসী।
মায়ে ঝিয়ে একেবারে হইলাম পরবাসী॥
দিন গোঞ্জরিয়া[১] যায় সন্ধ্যা আসে বাসে।
মায়ের চক্ষের জলে বুক যায় ভেসে॥

পাল্কী চড়িয়া দোহে যাই মামার বাড়ী।
সঙ্গেতে নাহি গেল এক কানার কড়ি॥

“আষাঢ় মাসেতে দেখ ভরা নদীর পানি।
মামার বাড়ীতে কান্দি দিবসরজনী॥
ডিঙ্গা বাইয়া আসবে ঘরে বাপ আর ভাই।
আশায় বান্ধিয়া বুক রজনী গুয়াই॥
এমন সময় দেখ কি কাম হইল।
বৈদেশে থাকিয়া মামা পত্র যে লিখিল॥

“দুঃখের কপালে দুঃখ লিখিল বিধাতা।
কারে বা কহিব আমি এই দুঃখের কথা॥
আগুনের উপরে যেন জ্বলিল আগুনি।
এই কথা নাহি জানে অভাগী জননী॥
এই পত্র সাক্ষী করি ধর্ম্মসভার আগে।
ছাড়িলাম মামার বাড়ী মনের বিরাগে॥

“সন্ধ্যা গোঞ্জরিয়া যায় না দেখি উপায়।
একেলা হাওরে পড়ি করি হায় হায়॥
মামার বাড়ীর অন্ন আর না খাইবাম আমি।
গলায় কলসী বান্ধ্যা ত্যজিব পরাণি॥
সাপে না খাইল মোরে বাঘে নাইসে খায়।
কোথায় যাইয়া লুকাই মুখ না দেখি উপায়॥
দেবেরে ডাকিয়া কই আশ্রা দিতে মোরে।
কেবা আশ্রা দিবে মোরে এই অন্ধকারে॥

  1. গোঞ্জরিরা=কাটিয়া, অতিবাহিত করিয়া।