পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দস্যু কেনারামের পালা
২২৯

এত শুনি পদ্মাবতী কোন কার্য্য করে।
রাতারাতি করি যায় বাপের গোচরে॥

  • যখন গাহিল পিতা বেউলা হইল রাড়ী।
  • কেনারামের চক্ষে জল বহে দড়দড়ি॥

শাখে কালে পাখীরা পশুরা কান্দে বনে।
বেহুলা হইল রাড়ী কালরাত্তির দিনে[১]
কান্দয়ে সনকা রাণী বুক চাপড়িয়া।
“লখিন্দর পুত্ত্র কোথা গেলরে ছাড়িয়া॥”
ছয় ভাইয়ের বৌয়ে কাদে শিরে দিয়া হাত।
মঠের মাথায় ফুর[২] পরল অকস্মাৎ॥
পাগল হইয়া শুনাই[৩] ফিরে পথে পথে।
“লখিন্দর পুত্ত্র মোর গেল কোন পথে॥”
যারে দেখে তারে রাণী পুত্ত্র পুত্ত্র বলে।
পথ নাহি দেখে রাণী চক্ষের যে জলে॥
এহিত কান্দন দেখি চান্দ সদাগর।
ধীরে ধীরে কয় মুখে “বম হর হর॥
কার পুত্র কার কন্যা মিছারে সংসার।
ভাই বন্ধু মিছ। সব সকলি মায়ার॥
পুত্ত্র মারা গেলে দেখ কেউ না যায় সাথে।
মরিবার কালে দেখ কেউ না যায় সঙ্গেতে॥
বাপ বল মা বল গর্ভ-সোদর ভাই।
কামাই করলে খাউয়া আছে সঙ্গে যাউয়া নাই॥”[৪]
কোটীশ্বর দাস কহে “সংসার অসার।
সংসার ছাড়িলে হবে ভবনদী পার॥

* * * *
  1. কালরাত্তির দিনে=বিবাহের পরের রাত্রিকে ‘কালরাত্রি’ বলিয়া থাকে। ‘দিনে’=সময়ে।
  2. ফুর=সম্ভবতঃ স্ফুরণ শব্দ হইতে আসিয়াছে, বিদ্যুৎ-স্ফুরণ।
  3. শুনাই=সনকা
  4. কামাই—নাই=উপার্জন করিলে খাইবার লোক আছে, সঙ্গে যাইবার কেউ নাই।