পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
মৈমনসিংহ-গীতিকা

জ্ঞাতি কুটুম্বে চান্দ ডাক দিয়া কয়।
“মরা ধরে রাখা আর উচিত না হয়॥
বিলম্ব করিতে দেখ শাস্ত্র মানান করে।
লখাইরে পুড়াও নিয়া গুঞ্জরীর[১] তীরে॥”

এই কথা শুনি তবে বেহুলাসুন্দরী।
শ্বশুরের পায়ে কহে বিলাপ নাছাড়ী[২]
বেহুলা আসিয়া কহে শ্বশুরের ঠাই।
“ভেলা বান্দিয়া দেহ দেবপুরে যাই॥”
কলাগাছ কাটিতে রাণী বাগানে পাঠায়।
চান্দ বলে “যে পাঠায় ঝাটা তার মাথায়॥
কানির উচ্ছিষ্ট পুত্ত্র জলেতে ভাসাও।
পুত্র মারা গেল সঙ্গে কলাগাছ দাও॥
এক কলাগাছ মোর নয় নয় বুড়ি।
কি কারণে দিব আমি হেন কলা ছাড়ি॥
লখীন্দর পুত্ত্র মইল সেও প্রাণে সয়।
কলাগাছ কাটা গেলে জীবন সংশয়॥”

তাহা শুনি পাত্র মিত্র বলয়ে চান্দেরে।
“পূর্ব্বের যতেক কথা পাশরিলে তারে॥
মৈলে মরা জিয়ায় হারাইলে ধন আনে।
সতীকন্যা বিবাহ করাইল তে কারণে॥
ইহাতে বিলম্ব নয় যাক স্বামী লইয়া।
ভেলা বান্ধি শীঘ্র তারে দেও ভাসাইয়া॥”

বেউলা বলে “শুন বাপ বণিক-নন্দন।
স্বামী লইয়া যাই আমি দেবের ভবন॥
দেবের সভাতে যাই পদ্মারে জিনিয়া।
সাতটী কুমার তব দিব জিয়াইয়া॥

  1. গুঞ্জরী=অপরাপর অনেক কাব্যে “গাঙ্গুর” নদীর উল্লেখ আছে।
  2. নাছাড়ী=লাচাড়ি।