পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

২৮৪
মৈমনসিংহ-গীতিকা

মনুষ্য-বসতি নাই নাহি মাতাপিতা।
যে দেশে বান্ধব নাই তুমি যাও তথা॥”

তারপর লীলাবতী গোপনে বসিয়া।
গর্গের সকল ফন্দি দিল জানাইয়া॥
“কতিপয় দুষ্ট লোক পিতারে ছলিল।
সর্ব্বনাশহেতু সবে যুক্তি করিল॥

* * * *

“কাল-গরল-বিষ অন্নে মাখাইয়া।
আসিছে রাক্ষসী লীলা তোমারে খুঁজিয়া॥
নাহি দয়া নাহি মায়া পাষাণ তার হিয়া।
রাক্ষসী হইয়াছে লীলা মনুষ্য হইয়া॥
কেমন করিয়া কিবা পরাণে ধরাই।
নিজ হস্তে বিষ দিয়া তোমাকে খাওয়াই॥
আজ তুমি ভিন্ন দেশে যাওরে পলাইয়া।
মরিবে অভাগী লীলা এ বিষ খাইয়া॥
শুন শুন শুনরে কঙ্ক আরে কঙ্ক আমার বচন।
যাইবার বেলা দেইখা যাহ লীলার মরণ॥”

শুনিয়া লীলার কথা কঙ্ক চমৎকার।
পন্থ নাহি পায়[১] শুধু দেখে অন্ধকার॥
নিদারুণ কথা কঙ্ক শুনিল যখন।
মস্তকে হুইল যেন বজ্রের পতন॥
ক্ষণেক থাকিয়া লীলায় কহে ধীরে ধীরে।
“দুষ্টের ছলনে পিতা ভুলেছে নিজেরে॥
চন্দ্রসূর্য্য সাক্ষী মোর সাক্ষী দেবগণে।
স্বপ্নে নাহি জানি পাপ পিতার চরণে॥
পরম পণ্ডিত পিতা কিছুদিন পরে।
দুষ্টের ছলনা প্রভু পাইবে বুঝিবারে॥

  1. পন্থ নাহি পায়=চোখে পথ দেখিতে পায় না।