দেখিতে পাইলেন। কথাটি এই—‘হুমায়ূনের যে অবস্থা, তাহাতে একমাত্র ভগবদনুগ্রহ ব্যতীত তাহার রক্ষার আর উপায় নাই। শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্যদানে ভগবানের প্রসন্নতা লাভ করা আবশ্যক। ধর্ম্মপ্রাণ, সরল-বিশ্বাসী বাদ্শাহ্ তৎক্ষণাৎ সঙ্কল্প করিলেন, জীবনের তুল্য শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য জগতে আর কিছুই নাই,—তিনি আত্মজীবন-বিনিময়ে পুত্রের প্রাণরক্ষা করিবেন। ইহাতে বাদ্শাহের অন্তরঙ্গ হিতৈষিগণের ঘোরতর আপত্তি হইবে, তাহা বলাই বাহুল্য। তাঁহারা বলিলেন,—‘জাঁহাপনা, ধনরত্ন মানসিক করুন, না হয় ধনভাণ্ডার, কিংবা মণির সেরা যে কোহিনূর, পুত্রের জন্য তাহাই উৎসর্গ করুন—আপনার জীবন দান করিবেন না।’ বাবর শাহ্ অচল অটল, কোন কথাই তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল না। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলিলেন,—‘আমার পুত্রের জীবনের সঙ্গে তুলিত হইতে পারে, দুনিয়ায় কি এমন কোন মণি আছে?’ ইহার আর উত্তর নাই। উপস্থিত সকলে নীরব।
বাবর ধীরে ধীরে হুমায়ূনের শয়নকক্ষে প্রবেশ করিয়া তাহার শিরোদেশে একটিবার স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন। তাহার পর গম্ভীরমুখে শয্যা প্রদক্ষিণ করিতে করিতে একান্ত মনে প্রার্থনা করিতে লাগিলেন,—‘মেহেরবান খোদা, যদি জীবন দিলে জীবন মিলে, তাহা হইলে আমি বাবর শাহ্, পুত্র হুমায়ূনের জন্য আমি আমার জীবন, আমার সত্তা অর্পণ করিলাম।’
বাবর সফলকাম হইয়াছিলেন; তৎক্ষণাৎ চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন,—‘কৃতকার্য্য হইয়াছি, আমি কৃতকার্য্য হইয়াছি।
১০