পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুল্‌বদন্‌

 হুমায়ূন্ তখন অতি ক্ষীণ, জীবনী শক্তিহীন; ঘোর অচেতন অবস্থা হইতে মাঝে মাঝে চেতনার কূলে উত্তীর্ণ হইতেছেন বটে, কিন্তু সে মুহূর্ত্তের জন্য। জীবনের কোন আশা নাই বলিয়া চিকিৎসকগণ মত প্রকাশ করিয়াছেন। পুত্রের অবস্থা দেখিয়া করুণারূপিনী মাহমের স্নেহার্দ্র কোমল হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছিল। কিন্তু বাদ্‌শাহের বিহ্বলতা দেখিয়া তাঁহাকে আত্মসংবরণ করিতে হইল। সম্রাট্‌কে সান্ত্বনা দিবার জন্য বলিলেন,—‘জাঁহাপনা, আপনি কেন আমার পুত্রের জন্য আকুল হইতেছেন? আপনি বাদ্‌শাহ্, আপনার আরও কত পুত্র; তাহাদের মুখ চাহিয়া হৃদয়কে শান্ত করুন। আমি যে কাতর হইতেছি, তাহার কারণ, আমার সবে এক পুত্র—এই হুমায়ূন্।’

 বাবর বলিলেন,—‘মহিষী, তুমি যাহা বলিতেছ, সব সত্য—আমার আরও পুত্র আছে; কিন্তু তোমার গর্ভজাত এই পুত্রটিকে আমি যত ভালবাসি, এত ভাল, আমি আর কাহাকেও বাসি না। মূমুর্ষু হুমায়ূন্ নীরোগ, সুখী, দীর্ঘজীবী হয়, ইহাই আমার প্রার্থনা; আর পুত্রগণের মধ্যে একমাত্র সে-ই আমার সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়, ইহাই আমার কামনা; কেন না আমি আর কাহাকেও তাহার সমকক্ষ মনে করি না।’

 বাদ্‌শাহ্ কোনক্রমেই সান্ত্বনালাভ করিতে পারিলেন না। মৃত্যুর করালছায়াঙ্কিত পুত্রের পাণ্ডুর মুখচ্ছবি নিরীক্ষণ করিতে করিতে তিনি যখন দিশাহারা হইয়া পড়িয়াছেন, তখন একটি কথা শুনিয়া তিনি যেন অন্ধকার অকূল পাথারে আশার আলো