পৃষ্ঠায় তাঁহার ক্ষীণ গন্ধটুকু আছে, পরিচয়ের ছিন্ন সূত্রটুকু কোথায় হারাইয়া গিয়াছে—খুঁজিয়া বাহির করিবার উপায় নাই। ‘দিউয়ান্-ই-মখ্ফী’তে তাঁহার রচিত অনেক কবিতা স্থান পাইয়াছিল সত্য; কিন্তু সে কোন ‘মখ্ফী’? যে-সমস্ত কবি গুপ্তভাবে কবিতা-রচনা ও প্রচার করেন, ফার্সীতে তাঁহাদের ছদ্মনাম ‘মখ্ফী’। ফার্সী ভাষায় মখ্ফী এক নহে—বহু। বাদশাহ্জাদীর হৃদয়ের অতুলনীয় ভাব-সম্পদ্ কোন্ মখ্ফীর সৃষ্টিপুষ্টি করিয়াছিল, তাহা আজ কে নিশ্চয় করিয়া বলিবে?
সম্রাট্ আওরংজীব কবিতার পক্ষপাতী ছিলেন না। কবিদিগকে তিনি মিথ্যাবাদী চাটুকার, আর তাঁহাদের রচনাকে জলবুদ্বুদের মত ব্যর্থ বলিয়া ঘৃণা প্রকাশ করিতেন। কোন কবিই তাঁহার দরবারে রাজ-অনুগ্রহ লাভ করিতে পারেন নাই। কিন্তু করুণারূপিণী জেবের করুণা হইতে যে অনেকেই বঞ্চিত হন নাই, তাহা বলা বাহুল্য। কন্যার করুণার ফল্গুধারা, আওরংজীবের আমলের সাহিত্যকে এইরূপে সঞ্জীবিত রাখিয়া ধন্য হইয়াছিল।
দুঃখের বিষয়, ইতিহাসের নামে কোন কোন উর্ব্বরমস্তিষ্ক কল্পনাজীবি লেখক, এই বিদ্যাচর্চ্চা-নিরতা, নিষ্ঠাবতী, আজীবন-কুমারী, নির্ম্মলস্বভাবা জেব্-উন্নিসাকে, অসম্ভব কাল্পনিক কাহিনীর নায়িকারূপে চিত্রিত করিয়া জনসাধারণের মনোরঞ্জনের প্রয়াস পাইয়াছেন। গল্পের উৎকৃষ্ট পাত্রী বাদ্শাহী হারেমের কুমারী-কন্যার মত আর কি হইতে পারে? এরূপ চরিত্র-সম্বন্ধে যে অতি সহজেই সাধারণের শ্রুতিমধুর অবৈধ-প্রেমের অপরূপ কাহিনী সৃষ্ট
৬৭