পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 মোহন অমনিবাস শিক্ষা দিয়ে বুঝিয়ে দিই, জীবনে যত কিছু অন্যায় কাজ সে করেছে, তা’র জন্য প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।” বলিতে বলিতে মোহনের মুখ ও চোখ ক্রোধে রক্তবর্ণ ধারণ করিল। সে পুনরায় কহিল, “অবিনাশ রায়কে আমি বহুদিন হতেই চিনি। আমি সন্দেহ করতাম — নরকের কীট অসৎ উপায়ে তার পাপ-দেহ পুষ্ট করছে। কিন্তু কোনদিন তার দিকে নজর দেবার অবসর হয় নি। আজ বুঝছি – তার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, তাই সরোজের অঙ্গে হাত দিয়েছে।” রমা অধীর আনন্দে কম্পিত কষ্ঠে কহিল, “ওগো তুমি আমাকে রক্ষা করো। আমার জন্য আবার তোমাকে ওই বিপদের পথে ছুটতে হবে বলে তুমি অভাগিনীকে মার্জনা করো। আমাকে বলো, তুমি দাদাকে দোষী বলে অবিশ্বাস কর নি।” মোহন তাহার মানসী-নারীকে ধীরে ধীরে পাশ্বে উপবেশন করাইয়া কহিল, “আমি এক মুহুর্তের জন্য তা’ ভাবি না, ভাবতে পারি না যে, আমার নির্মল-মনা বন্ধু সরোজ, হত্যা করা দূরে থাক, কখনও চিন্তার মাঝেও সে চিন্তার প্রশয় দিতে পারে। আমি শপথ করছি রানী, আমি এই পাষন্ড রায় সাহেবকে এমন শিক্ষা দেব যা অন্যে স্মরণ করতেও ভয় পাবে। সরোজকে মুক্ত করতে যদি বিনিময়ে আমার প্রাণও দিতে হয় — দেব। তবু তা’কে মুক্ত করে এনে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করবো, রমা।” মোহন এই ভয়াতুর কপোতীকে নির্ভয় করিবার জন্য দুই বাহুর মধ্যে বধিয়া ফেলিল। (6) - রায় সাহেব অবিনাশচন্দ্র রায় হাসপাতাল হইতে নিজ বাড়ীতে আসিয়াছেন। সরোজ পুলিস-হাজতে। তাহার জামিন মঞ্জুর তো হয়ই নাই, উপরন্তু কাহারও সহিত সাক্ষাৎ করিবার অনুমতি পর্যন্ত প্রদত্ত হয় নাই। মোহন রমাকে পুরীর বাড়ীতে থাকিবার বন্দোবস্ত করিয়া কলিকাতায় আসিয়া প্রথমেই সংবাদ লইয়া জানিল যে, রায় সাহেব অবিনাশচন্দ্র রায় বিপত্নীক, তাহার সংসারে আত্মীয়া বলিতে দ্বিতীয় প্রাণী ছিল না। এক সুবৃহৎ প্রাসাদ-তুল্য অট্টালিকায় তিনি বাস করেন। মাত্র ভৃত্য ও পাচিক প্রভৃতি লইয়াই তাহার সংসার। মোহন ইহাও অবগত হইল যে, রায় সাহেবের আয়ের কোন দৃশ্যতঃ প্ৰস্থা নাই। কোথা হইতে র্তাহার অর্থ আসে, তাহা এক সমস্যার বিষয়। তিনি রোলস রয়েস চড়িয়া বেড়ান। গভর্নমেন্টের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত বড়ো বড়ো কৰ্মচারীদের সহিত তাহার অবাধ মেলামেশায় তাহার প্রভাব ক্রমশঃ বৃদ্ধির পথে চলিয়াছে। ৬ রায় সাহেব মদ্যপ, র্তাহার বারনারীতেও অরুচি নাই ; অধিকন্তু একটু বেশী মাত্রাতেই রুচি আছে। তিনি দুই হাতে অর্থ ব্যয় করেন। তাহার ব্যয়াধিক্য দেখিয়া মনে হয়, অর্থের প্রতি র্তাহার মমতা নাই। এ হেন রায় সাহেবের বাড়ীতে ডাকাতি করিতে গিয়া হত্যাপরাধে সরোজ বন্দী হইয়াছে। বিচারের ফল কি হইতে পারে, সে বিষয়ে মোহনের কোন সন্দেহ রহিল না। মোহন ছদ্মবেশে রায় সাহেবের এক ভূত্যের সহিত বন্ধুত্ব পাতাইল। প্রচুর অর্থ দিয়া তাহাকে ক্রীত গোলামের মত করিয়া তুলিল। তাহার মুখে একদিন মোহন শুনিল যে, অল্প-বয়স্কা পাচিকা ঠাকুরন চাকুরির ও প্রাপ্য-মাহিনার মায়া কাটাইয়া সরিয়া পড়িয়াছে।