পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পত্র

অকর্তব্য কিছু দেখতে পাই নে; আসল কথাটা হচ্ছে, ইচ্ছে নেই। লাইব্রেরি যদি ball-room হত, তা হলে তাঁরা অধিকার অনধিকার নিয়ে বড়ো মাথা ঘোরাতেন না। আর politics যদি নভেলের ভায়রাভাই হত, তা হলে তাঁরা পুরুষের পাত থেকে politics নিয়ে দু হাতে করে গিলতেন। দুর্বলতা মেয়েদের একটা ভূষণ বলে গণ্য, এই জন্যে দুর্বলতা মেয়েদের একটা গর্বের বিষয়; মেয়েরা দু পা চলে একেবারে এলিয়ে পড়লে আমাদের চোকে যে কেমন একটু ভালো লাগে আমার বোধ হয় তার কারণ, ও রকম দেখলে আমাদের আশ্রয় দেবার প্রবৃত্তি চরিতার্থ হয়— আশ্রয় দেবার প্রবৃত্তি কতকটা গর্ব থেকে হয়। নিজের শক্তি খাটাবার একটা অবসর পেলুম ব’লে বেশ একটু তৃপ্তি হয়; বিশেষতঃ বেশ একটি সুন্দর পদার্থ যার দিকে আমাদের স্বভাবতঃ মনের টান, সে আমাদের আশ্রয়ে আমাদের ছায়ায় লতার মতো জড়িয়ে থাকুক তা আমাদের ইচ্ছে করে। এই জন্যে মেয়েদের দুর্বলতা আমাদের ভালো লাগে, তাই জন্যে আমরা তার মধ্যে একটু সৌন্দর্য দেখি, সুতরাং অনেক মেয়ে শ্রান্ত না হলেও এলিয়ে পড়েন—যিনি দশটা কাজ সহজে করতে পারেন তিনি দেড়খানা কাজ করেই হাঁপাতে থাকেন। বুদ্ধিবিদ্যার বিষয়েও এই রকম; মেয়েরা জাঁক করে বলেন, ‘আমরা, বাপু, ওসব politics science বুঝি নে, শুঝি নে।’ বিদ্যার অভাব, বুদ্ধির খর্বতা, একটা প্রকাশ্য জাঁকের বিষয় হয়ে ওঠে। পুরুষরা অমনি অতি স্নেহপূর্ণ আদর করে তাঁদের বলেন, ‘হাঁ, ঠাকরুনরা, তোমরা ঘরের লক্ষ্মী ঘরে থাকো, ছেলেপিলে মানুষ করো, ও-সকল শুষ্ক কাষ্ঠের বোঝা তোমাদের বইতে হবে না।’ ভাবটা যেন, ‘তোমাদের একটা মহা কষ্ট থেকে উদ্ধার করলেম।’ কিন্তু বিদ্যাচর্চা রহিত করলে একটা ভার থেকে মুক্ত করা হয় না, একটা অধিকার থেকে বঞ্চিত

১৩৫