পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পত্র

পাঠকেরা তাঁহার কথা কী ভাবে গ্রহণ করিবেন তাহার প্রতি।’ দোহাই পাঠক-মহাশয়দের, আমি এক কথা বললে আপনারা আর-এক কথা যদি শোনেন তবে আমি গরিব মারা যাই কেন? আমি যদি বলি বিশ্বস্তর বাবুর দুই পা আর আপনাদের মধ্যে কেউ শোনেন বিশ্বম্ভর বাবুর চার পা, তা হলে যদি সম্পাদকমহাশয় আমার চুলের ঝুঁটি ধরে বিধিমতে নিগ্রহ করেন ও দশটা শাস্ত্র থেকে প্রমাণ উদ্ধৃত করে দশ জন পশুতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতের মত নিয়ে আমাকে দশ ঘণ্টা ধরে গম্ভীর ভাবে বোঝাতে আরম্ভ করেন যে বিশ্বম্ভর বাবুর দুই পায়ের অধিক পা হবার কোনো প্রকার সম্ভাবনা নেই— শুদ্ধ তাই নয়, তাই নিয়ে হাসি-টিটকিরি ক’রে, ঠাট্টা-মসকরা ক’রে, দশ জন ভদ্রলোকের কাছে আমাকে বিধিমতে অপদস্থ করেন যদি—তবে আমি সহ্য করি কী করে বলুন দেখি! শাশুড়িরা যে ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেন, তাতে যে অনেক সময়ে অনেক উপকার হয় সে বিষয়ে আমি দ্বিরুক্তি করি নে, কিন্তু আপনারা কি অস্বীকার করতে পারেন যে, উপকারটা বউয়ের হোক কিন্তু যদি কারু পিঠে বেদনা হয় তো সে ঝিয়েরই। আচ্ছা, ভালো— আমার পিঠ বেকার অবস্থায় পড়ে আছে আর সম্পাদক-মহাশয়ের মুষ্টির যদি আর কোনো কাজ না থাকে তবে আমার নিরীহ পিঠের ওপর যথেচ্ছাচার করুন, কিন্তু এটা যেন মনে থাকে সে কিলগুলো প্রাপ্য আপনাদের, কেবল সম্পাদক-মহাশয়ের অপূর্ব বিচারে সে কিলের ভার যিশুখৃস্টের মতো আপনাদের হয়ে সমস্ত আমাকেই বহন করতে হচ্ছে।

 লেখক-মহাশয়ের সঙ্গে আমার একটা বিবাদ ছিল এই যে, তিনি স্বাধীনতা অর্থে বেহায়ামো, অবিনয়, অসরলতা, উচ্চের প্রতি

১৬৯