পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

করলে। যাঁদের সুশ্রী মেয়ে আছে তাঁরা মনে করেন, অমুক মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল আর আমার মেয়েদের হল না! আর সাধারণ মিস্‌-শ্রেণীদের তো রাগে ঘৃণায় অভিমানে বুক ফেটে যায় যে বেচারির সৌভাগ্যক্রমে বিয়ে হয়ে গেছে, যেন তার কত অপরাধ! যাঁরা সেই কুশ্রী মেয়ের রূপ নিয়ে সমালোচনা করছিলেন তাঁদের মধ্যে একটি মেয়েও সুশ্রী ছিলেন না, পরের কুরূপ নিয়ে বিদ্রূপ করার অধিকার তাঁদের এক তিলও নেই। কাপড়-চোপড়, গয়নাপত্র, কার চোক টেরা, কার নাক মোটা, কার ঠোঁট পুরু, কার বা হাতের কড়ে আঙুলের নখের কোণ বাঁকা―এই-সব নিয়ে এখানকার মেয়েতে মেয়েতে ভারী হাসি-তামাসা চলে থাকে। আমার যতখানি অভিজ্ঞতা (যদিও খুব কম) তাতে তো আমি এই রকম দেখেছি। এ দেশের মেয়েরা পিয়ানো বাজায়, গান গায়, আগুনের ধারে আগুন পোয়ায়, সোফায় ঠেসান দিয়ে নভেল পড়ে, ভিজিটরদের সঙ্গে আলাপচারি করে ও আবশ্যক বা অনাবশ্যক-মতে যুবকদের সঙ্গে flirt করে এই তো আমার অভিজ্ঞতা। কিন্তু এ দেশের old maid শ্রেণীরা ভয়ংকর কাজের লোক। Temperance Meeting, Working Men's Society প্রভৃতি যত প্রকার অনুষ্ঠানের কোলাহল আছে, সমুদয়ের মূলে তাঁরা আছেন। পুরুষদের মতো তাঁদের আপিসে যেতে হয় না, মেয়েদের মতো তাঁদের ছেলেপিলে মানুষ করতে হয় না, এ দিকে হয়তো এত বয়স হয়েছে যে ‘বলে’ গিয়ে নাচলে বা flirt করে সময় কাটালে দশ জনে হাসবে, হাতে তাদের সময় অগাধ পড়ে রয়েছে―তাই জন্যে তাঁরা অনেককাজ করতে পারেন। বাস্তবিক তাতে অনেক উপকার হয়। বিদেশ থেকে আমরা এই মেয়েদেরই নাম বেশি শুনতে পাই―কিন্তু এদের থেকেই যদি সমস্ত বিলিতি মেয়েদের বিচার করতে

২২