পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

দেখে তোমরা আধখানা হয়ে পিছু হ’টে হ’টে দেয়ালের এক কোণে গিয়ে আশ্রয় নেবে। এ বিলেত-রাজ্য থেকে ফিরে গেলে পর বিক্রমাদিত্যের সিদ্ধ-বেতালের মতো আমার সঙ্গে সঙ্গে একটি ‘Oberon’ ফিরবে, সে তোমাদের প্রতি লোকের চোখে এমন একটি মায়া-রস নিংড়ে দেবে যে, আমাকে যদি গর্দভ-মুখোষিত ‘Bottom’এর মতোও দেখতে হয়, তবু তোমরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।

 বিলেতে নতুন এসেই বাঙালিদের চোখে কোন্ জিনিস ঠেকে, বিলিতি সমাজে নতুন মিশে প্রথমে বাঙালিদের কিরকম লাগে, সে-সকল বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপাততঃ কিছু বলব না। কেননা, এ-সকল বিষয় আমার বিচার করবার অধিকার নেই, যাঁরা পূর্বে বিলেতে অনেক কাল ছিলেন ও বিলেত যাঁরা খুব ভালো করে চেনেন তাঁরা আমাকে সঙ্গে করে এনেছেন ও তাঁদের সঙ্গেই আমি বাস করছি। বিলাতে আসবার আগেই বিলেতের বিষয় তাঁদের কাছে অনেক শুনতে পেতেম, সুতরাং এখানে এসে খুব অল্প জিনিস নিতান্ত নতুন মনে হয়েছে, এখানকার লোকের সঙ্গে মিশতে গিয়ে প্রতি পদে হুঁচট খেয়ে খেয়ে আচার ব্যবহার আমাকে শিখতে হয় নি। এখানকার সমাজের স্ফটিকশালায় প্রবেশ ক’রে যখনি জল মনে করে কাপড় তুলতে গিয়েছি তখনি আমার সঙ্গী আমাকে চোখ টিপে বলে দিয়েছেন, ‘এ জল নয়, এ মেজে।’ সুতরাং আমাকে অপ্রস্তুত হতে হয় নি। এখানকার চাকচিক্যময় সমাজের দেয়াল-ব্যাপী আয়না দেখে আমি দরজা মনে করে যেমন সেই দিকে যাবার উদ্যোগ করেছি আমার সঙ্গী অমনি আমার কানে কানে বলে দিয়েছেন যে, ‘এ দরজা নয়, এ দরজা নয়, এ দেয়াল।’ সুতরাং মাথা ঠুকে ঠুকে আমাকে শিখতে হয় নি যে, সেটা দরজা নয়, দেয়াল। অন্ধকারে প্রথম এলে কিছু দেখা যায়

৫০