পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

না, অনেক ক্ষণ থাকলে—অন্ধকার চোখে অনেকটা সয়ে গেলে তার পরে চার দিকের জিনিস দেখা যায়। কিন্তু আমাকে সে রকম করে দেখতে হয় নি, আমার সঙ্গেই আলো ছিল। আমি তাই ভাবছি যে, আমার নিজের অভিজ্ঞতার বিষয় আপাততঃ তোমাদের কিছু বলব না। এখানকার দুই-এক জন বাঙালির মুখে তাঁদের যে রকম বিবরণ শুনেছি তাই তোমাদের লিখছি।

 জাহাজে তো তাঁরা উঠলেন। যাত্রীদের সেবার জন্যে জাহাজে অনেক ইংরেজ চাকর থাকে, তাদের নিয়েই এঁদের প্রথম গোল বাধে। এঁরা অনেকে তাদের ‘সার-সার’ (Sir) বলে সম্বোধন করতেন, তাদের কোনো কাজ করতে হুকুম দিতে তাঁদের বাধোবাধো করত। জাহাজে তাঁরা অত্যন্ত সসংকোচভাবে থাকতেন। ‘কোথায় কী করতে হবে রে বাপু! গোরা-কাপ্তেন গোরা-মাঝি পাছে রুখে দু কথা শুনিয়ে দেয়, নিতান্তই তাদের আশ্রয়ে আছি— কালো মানুষ দেখেও যে টিকিট কিনতে দিয়েছেন এই তাঁদের যথেষ্ট অনুগ্রহ!’ তাঁরা বলেন, সকল বিষয়েই তাঁদের-যে ও রকম সংকোচ বোধ হত তার আর একটা কারণ ছিল—‘এক জন ইংরাজ যাত্রীর চেয়ে আমাদের ও রকম সংকোচের ত্রস্ত অবস্থা কেন হয় জানো? সেটা কেবল ভয়ে নয়, তার সঙ্গে কতকটা লজ্জাও আছে। আমাদের কপালে নেটিব ব’লে একেবারে মার্কা মারা ছিল; আমরা যদি একটা কোনো দস্তুরবিরুদ্ধ কাজ করি তা হলে সাহেবরা হেসে উঠবেন, বলবেন ওটা অসভ্য—কিছু জানে না। তাই জন্যে যে কাজ করতে যাই, মনে হয়, পাছে এটা বেদস্তুর হয়ে পড়ে, আর বেদস্তুর কাজ করলে তারা হুট করে তাড়িয়েই বা দেয়, আর যদি বা তাড়িয়ে না দেয়, নেটিব ব’লে হেসেই বা ওঠে!’ জাহাজে ইংরাজদের সঙ্গে মেশা বড়ো হয়ে ওঠে না। যে সাহেবেরা

৫১