পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

অভিনয়ের ওপর তাঁর দেশে ফিরে যাওয়া নির্ভর করছে। তিনি তাঁর বাড়ির লোকদের ভালোবাসার তত মূল্য দেখেন না, যত তাদের ভালোবাসার অভিনয়ের। তিনি তাঁর স্বীয় পরিবারদের কত ভালোবাসেন, এর থেকে একবার বিবেচনা করে দেখো। তাঁদের একটিমাত্র আচারের পরিবর্তন না হলে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে পারেন না, না জানি সে কী পরিবর্তন! সে পরিবর্তনে হয়তো চন্দ্রসূর্যের উদয়াস্তের বন্দোবস্ত একেবারে উলটে যেতে পারে, প্রকৃতির একটা মহা বিপ্লব বাধতে পারে। সে পরিবর্তন কী? না, S. K. Nandi Esqr.এর স্ত্রী পরিবারেরা যদি তাঁকে দেখে আনন্দের অশ্রু বর্ষণ না করে ছুটে তাঁকে আলিঙ্গন করতে আসে! আমি আগেই বলেছি, বিলেতের কতকগুলি বাহ্যিক ছোটোখাটো বিষয় বাঙালির চোখে পড়ে। তাঁরা যখন সাহেব হতে যান তখন সাহেবদের ছোটোখাটো আচারগুলি নকল করতে যান। ছোটোখাটো বিষয়ে তাঁদের খুঁটিনাটি যদি দেখো,তবে একেবারে আশ্চর্য হয়ে যাও। ডিনারের টেবিলে কাঁটা ছুরি উলটে ধরতে হবে কি পালটে ধরতে হবে তাই জানবার জন্যে তাঁদের প্রাণপণ যত্ন অন্বেষণ ও ‘গবেষণা’ দেখলে তোমার তাঁদের উপর ভক্তির উদয় হবে। কোটের কোন্ ছাঁটটা fashionable হয়েছে, আজকাল nobilityরা আঁট প্যাণ্টলুন পরেন কি ঢলকো প্যাণ্টলুন পরেন, waltz নাচেন কি polka নাচেন, মাছের পর মাংস খান কি মাংসের পর মাছ খান, সে বিষয়ে তাঁরা অভ্রান্ত খবর রাখেন। তুমি যদি দস্তানা পরবার সময় আগে থাকতে বুড়ো আঙুল গলিয়ে দেও তিনি তৎক্ষণাৎ বলে দেবেন— ও রকম দস্তুর নয়। ঐ রকম ছোটোখাটো বিষয়ে এক জন বাঙালি যত দস্তুর বেদস্তুর নিয়ে নাড়াচাড়া করেন এমন এক জন জন‍্বুল করেন না। তুমি যদি মাছ খাবার সময় ছুরি ব্যবহার

৬৯