পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর কৃষ্ণ চর্ম দেখে আর একজন ভারতবর্ষীয় এসে তাঁকে হিন্দুস্থানিতে দুই-এক কথা জিজ্ঞাসা করে— তিনি মহা খাপা হয়ে তার কথার উত্তর না দিয়ে চলে যান। কিন্তু এত রাগ করবার তাৎপর্য কী? তাঁর ইচ্ছে, তাঁকে দেখে কেউ মনে না করতে পারে যে তিনি হিন্দুস্থানি বোঝেন। তাঁর মা-বাপেরা যে বাঙালি ও সে হতভাগ্যেরা যে বাংলায় কথা কয় এতে তিনি নিতান্ত লজ্জিত আছেন। আহা, যদি টেম্‌সের জলে স্নান করলে রঙটা বদলাত তবে কী সুখেরই হত! এক জন ইঙ্গবঙ্গ একটি ‘জাতীয় সংগীত’ রামপ্রসাদী সুরে রচনা করেছেন; এই গানটার একটু অংশ পূর্ব পত্রে লিখেছি, বাকি আর-একটু মনে পড়েছে— এই জন্য আবার তার উল্লেখ করছি। যদিও এটা কতকটা ঠাট্টার ভাবে লেখা হয়েছে, কিন্তু আমার বোধ হয় এর ভিতরে অনেকটা সত্যি আছে। এ গীত যাঁর রচনা তিনি রামপ্রসাদের মতো শ্যামার উপাসক নন, তিনি গৌরীভক্ত। এই জন্যে গৌরীকে সম্বোধন করে বলছেন—

মা, এবার মলে সাহেব হব
রাঙা চুলে হ্যাট বসিয়ে পোড়া নেটিব নাম ঘোচাব!
শাদা হাতে হাত দিয়ে, মা, বাগানে বেড়াতে যাব—
আবার কালো বদন দেখলে পরে ‘ডার্কি’ বলে মুখ ফেরাব।

 আমি পূর্বেই বিলেতের landlady (বাড়িওয়ালী) শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছি। তারা বাড়ির লোকদের আবশ্যকমত সেবা করে। অনেক ভাড়াটে থাকলে তারা চাকরানী রাখে, এবং অনেক সময়ে তাদের আপনাদের মেয়ে বা অন্য আত্মীয়েরা তাদের সাহায্য করবার জন্যে থাকে। এই landlady শ্রেণীরা আমাদের বিদেশী ইঙ্গবঙ্গদের প্রবাসদুঃখ অনেক পরিমাণে দূর করে, কিম্বা প্রবাস-

৭৩