পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

বর্ষীয়েরা অত্যন্ত অসভ্য ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন; তিনি ভারতবর্ষীয়দের ‘নেটিব নেটিব’ করে সম্বোধন করেন। সভার লোকদের হাসাবার অভিপ্রায়ে নেটিব nautch girlরা কিরকম করে নাচে অঙ্গভঙ্গী করে তার নকল করা হয় ও তাই দেখে সকলে হাসলে পরম আনন্দ উপভোগ করেন। তাঁরা যখন ভারতবর্ষীয়দের নিন্দে করতে থাকেন তখন তাঁরা মনে মনে কল্পনা করেন তাঁরা নিজে ‘নেটিব’ দলের বহির‍্ভূত! তিনি হয়তো মনে করেন, তাঁর শ্রোতারা অন্যান্য ভারতবর্ষীয়দের সঙ্গে তুলনা করে তাঁকে পচাপুকুরের পদ্ম— কাঁটাবনের গোলাপ ব’লে মাথায় করে নেবে। তাঁর বিশ্বাস, তিনি যখন ভারতবর্ষীয়দের প্রেজুডিসের উপর কটাক্ষপাত করে অপর্যাপ্ত হাস্যকৌতুক করেন তখন সকলে তাঁকে অবিশ্যি সে-সকল ‘প্রেজুডিস’ হতে মুক্ত বলে গ্রহণ করবেন। তাঁর নিতান্ত ইচ্ছে, তাঁকে কেউ ভারতবর্ষীয় দলের মধ্যে গণ্য না করে। আমার মনে আছে, আমি দেশে থাকতে এক জন সুশিক্ষিত উড়িষ্যাবাসী আমার কাছে কথায় কথায় বলেছিলেন যে, ‘উড়ে-মেড়ারা বড়ো মূর্খ!’ শুনে আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে গিয়েছিল। আমার এক বন্ধু পূর্বাঞ্চলে তাঁর জমিদারি দেখতে গিয়েছিলেন, এক জন মুসলমান তাঁকে কথা-প্রসঙ্গে বলেছিল, ‘মশায়, নেড়েদের কখনো বিশ্বাস করবেন না।’ এই উড়িষ্যাবাসীর মনোগত ভাব এই যে, ‘আমি মূর্খ নই।’ আর এই মুসলমানটি জানাতে চান যে, তিনি বিশ্বাসপাত্র। কেননা, নিজে মূর্খ হলে এই উড়িষ্যাবাসী কখনও অন্যের মূর্খতা নিয়ে বিদ্রূপ করতেন না, আর এই মুসলমানটির যখন স্বজাতির অবিশ্বাসিতার ওপর এত ঘৃণা তখন তিনি নিজে বিশ্বাসী না হয়ে যান না। এই রকম দেখতে পাবে যে, সাহেব-সাজা বাঙালিদের প্রতি পদে ভয় পাছে তাঁরা বাঙালি বলে ধরা পড়েন। এক জন বাঙালি একবার

৭২