পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

শিরে সহ্য করে আসছি— এই দূর দেশে এসে একটু মাথা তোলবার অবকাশ পাওয়া যায়; এখানকার লোকেরা আমাদের অনেকটা সমান ভাবে ব্যবহার করে বলেই আমাদের পদাঘাতজর্জরিত মন একটু বল পেয়ে আত্মনির্ভর স্বাধীনতাপ্রিয়তা প্রভৃতি অনেকগুলি পৌরুষিক গুণ শিক্ষা করবার সুবিধে পায়; কিন্তু এখানেও দলে দলে এসে তোমরা যদি হীন ও নীচ ব্যবহার করতে আরম্ভ করো, এখানকার লোকের মনেও বাঙালিদের ওপর ঘৃণা জন্মিয়ে দেও, তা হলে এখেনেও তোমাদের কপালে সেই উপেক্ষা সেই নিদারুণ ঘৃণা আছে! যে পথে যাবে বাঙালি বলে তোমাদের দিকে সকলে আঙুল বাড়াবে, যে সভায় যাবে সভাস্থ লোকেরা তোমাদের দিকে তাচ্ছিল্যের ভ্রূকুঞ্চিত কটাক্ষ বর্ষণ করবে। বিলেতের কুহকগুলি আগে থাকতে তোমাদের চক্ষে ধরলেম; যখন বিলেতে আসবে তখন সাবধানে পদক্ষেপ কোরো। ইঙ্গবঙ্গদের দোষগুলিই আমি বিস্তৃত করে বর্ণনা করলেম—কেননা, লোকে গুণের চেয়ে দোষগুলিই অতি শীঘ্র ও সহজে অনুকরণ করে।

 যা হোক, বাঙালিরা বিলাতের কামরূপে রূপান্তর ধারণ করে দেশে ফিরে চললেন। এখন তাঁদের একটা ভয় হচ্ছে, পাছে বিলাতে আসবার আগে তাঁদের যে-সকল বন্ধু ছিলেন তাঁরা কাছে ঘেঁষে তাঁদের সঙ্গে আলাপ করতে আসেন। দেশে গিয়ে তাই তাঁদের বিশেষ উগ্রমূর্তি ধারণ করতে হয়। কারও বা অত্যন্ত ভাবনা হচ্ছে, দেশে গিয়ে কাকাকে কী করে প্রণাম করব? কারও বা তাঁর স্ত্রীর ঘোমটাচ্ছন্ন মুখ কল্পনায় এসে আপাদমস্তক জ্বলতে আরম্ভ করেছে। যা হোক, দেশে তো পৌঁছলেন। তাঁর স্ত্রীকে যথাসাধ্য পালিশ ও বার্নিষ করে ‘নেটিব’ কাকেদের দল ছেড়ে ইংরেজ ময়ূরের দলে মিশতে চললেন। আগে কে জানত বলো যে

৮০