পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

সেখানে গিয়ে অত ঠোকর খাবেন! ভারতীতে ‘ভারতবর্ষীয় ইংরাজ’ বলে প্রবন্ধের এক জায়গায় লেখা আছে—

 ‘আমরা বিলাতে যে, এই-সকল চাকচিক্য দেখিয়। মুগ্ধ হইয়া যাই, তাহা আশ্চর্য নহে। এ দেশে আমাদের চক্ষে এ-সকল সচরাচর পতিত হয় না বলিয়া আমরা এক প্রকার সুস্থির থাকি; ইংলন্‌ডে গিয়া ইংরেজ-মহলে প্রবেশ করিয়া আমাদের মস্তক এমন ঘূর্ণিত হইয়া যায় যে, আপনাকে আপনারা স্থির রাখিতে পারি না। স্বদেশের প্রতি মমতা চলিয়া যায়, দেশীয়দিগের উপর অসভ্য বর্বর বলিয়া ঘৃণা জন্মে। যাহা ইংরাজি তাহাই সেব্য, যাহা দেশীয় ত্যাজ্য! হায়! ভারতবর্ষে ফিরিয়া আসিয়া আমাদের চক্ষু ফোটে, আমরা দেখিতে পাই—এ জাদুর রাজ্য আমাদের নহে। আমরা যে ইংরাজের পদধূলি লইতে যাই, তাহাদের পদাঘাত পাইয়া অবশেষে আমাদের চৈতন্য হয়।’

 ভারতবর্ষে গিয়ে ইঙ্গবঙ্গদের কিরকম অবস্থা হয় সে বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতাও নেই, বক্তব্যও নেই। কিন্তু কিছু কাল ভারতবর্ষে থেকে তার পরে ইংলন্‌ডে এলে কিরকম ভাব হয় তা আমি অনেকের দেখেছি। তাঁদের ইংলন্‌ড আর তেমন ভালো লাগে না; অনেক সময়ে তাঁরা ভেবে পান না—ইংলন্‌ড বদলেছে কি তাঁরা বদলেছেন। আগে ইংলন্‌ডের অতি সামান্য জিনিস যা-কিছু ভালো লাগত, এখন ইংলন্‌ডের শীত ইংলন্‌ডের বর্ষা তাঁদের ভালো লাগছে না— এখন তাঁরা ভারতবর্ষে ফিরে যেতে হলে দুঃখিত হন না। তাঁরা বলেন, আগে তাঁদের ইংলন্‌ডের straw-berry ফল অত্যন্ত ভালো লাগত, এমন-কি তাঁরা যত রকম ফল খেয়েছেন তার মধ্যে straw-berryই তাঁদের সকলের চেয়ে স্বাদু মনে হত। কিন্তু এই কয় বৎসরের মধ্যে straw-berryর স্বাদ বদলে গেল না কী! এখন

৮১