পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

নাবার ঘর আছে বােধ হয়— এত লােকে মিলে হাত মুখ ধােওয়া নাওয়া নিয়ে বোধ হয় কিঞ্চিৎ গােল বাধবে। যা হােক, ট্রেনে চড়ে বসে বেশ নিশ্চিন্ত বােধ হচ্ছে। মেঘ করে টিপ্‌টিপ্‌ বৃষ্টি হচ্ছে। আহার করে এলুম। প্রথমে দুই দিকে কেবল আঙুরের ক্ষেত। তার পরে olive-বাগান। বামে দূরে পর্বত, দক্ষিণে সমুদ্র, মধ্যে কেবল অলিভ-বন। বাঁকাচোরা, গ্রন্থি ও ফাটল-বিশিষ্ট, বলি-অঙ্কিত গাছ―পাতাগুলাে যেন ঊর্ধ্বমুখ― খুব যত্নে যেন চাষ করা― আমাদের দেশের মতাে জঙ্গল নয়― ফাঁক ফাঁক পোঁতা― পাহাড়ে জায়গা― চষা জমির মধ্যে পাথরের কুচি— এক-এক জায়গায় গাছতলায় ভেড়া চরছে। মাঝে মাঝে সমুদ্রের ধারে এক-একটি ছােটো শহর আসছে― চর্চচুড়া-মুকুটিত শাদা ধব্‌ধবে নগরটি সমুদ্রের নীল চিত্রপটের উপর চমৎকার দেখাচ্ছে। (ব্রিন্দিসিতে নাববার সময় Evans আমাকে দেখালে ইটালীয় পুলিসম্যানেরা সৈনিকবেশে তলােয়ার নিয়ে বেড়ায়। বললে, এর থেকে বােঝো এখানকার গবর্মেণ্ট্ কিরকম; এদের অনেক রকমের institutions আছে, কিন্তু freedom নেই। আমরা সাড়ে-এগারােটার সময় ব্রিন্দিসি ছাড়ি।) এক-একটা অলিভ গাছ এমন বেঁকে ঝুকে পড়েছে যে পাথর উচু করে করে তাকে ঠেকো দিয়ে রাখতে হয়েছে। শীত তেমন বেশি নয়। আমাদের পৌষের চেয়ে কম বােধ হয়, তবে শীত গ্রীষ্ম সম্বন্ধে তুলনা ভারী শক্ত। প্রায়ই একটা-না-একটি সমুদ্রতীরের শহর। ঐ সামনের শহরটা মস্ত মনে হচ্ছে।― দু ধারে কেবল ফলের বন এবং আঙুরের ক্ষেত― মাঝে মাঝে এক-একটা পাথরের বাড়ি। ছােটোখাটো শহর, শাদা সােজা রাস্তা। ক্ষেতগুলাে পাথরের টুকরাে উচু উচু ক’রে বেড়া-দেওয়া। এখনাে ডাইনে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে— বামের পর্বত গেছে। ক্ষেতের মাঝে মাঝে পাথর উঁচু

১৬০