পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রকাশিত হয়। “ডালি” নামে আর একখানি যন্ত্রস্থ গল্পগ্রন্থের বিজ্ঞাপন দেখতুম “সাহিত্যে”র মলাটে, তবে যন্ত্রগর্ভ থেকে নির্গত হয়েছিল ব’লে মনে পড়ে না। কিন্তু গল্পরচনায় এমন দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কেন যে তিনি লেখনী ত্যাগ করলেন জানি না। কারণ হয়তো কুড়েমি। তা না হলে আজ তিনি কথাসাহিত্যেও স্থায়ী যশ অর্জন করতে পারতেন।

 সুরেশচন্দ্রের রচনানির্বাচনশক্তি দেখেই বোঝা যায়, সমালোচকের সুক্ষ্মদৃষ্টি থেকে তিনি বঞ্চিত ছিলেন না। কিন্তু শ্রেষ্ঠ সমালোচকের প্রধান যা গুণ, সেই নিরপেক্ষতার অভাব ছিল তাঁর যথেষ্ট। ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্যেও তিনি কর্তব্যভ্রষ্ট হয়েছেন বার বার। সুবিধা পেলেই তিনি তীব্র ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করতে ছাড়তেন না। মাঝে মাঝে প্রশংসাও যে করেন, নি, তা নয়— কিন্তু সে একটুখানি সুখ্যাতি আর অনেকখানি অখ্যাতি— প্রায় চারআনা আর বারআনা। কেবল রবীন্দ্রনাথকে নয়, রবীন্দ্রনাথের ভক্তদেরও। ছবির মর্ম তিনি কতটুকু বুঝতেন, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে, কিন্তু প্রাচ্য চিত্রকলার বিরুদ্ধে তিনি দস্তুরমত ‘জেহাদ’ ঘোষণা করেছিলেন। কুযুক্তির সাহায্য নিয়ে অবনীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করেছেন যেখানে সেখানে।

 অনেকে মনে করেন “মাসিক সাহিত্য সমালোচনা”য় তিনি অতুলনীয় বিচারশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। আমি তা মনে করি না। ঐ আলোচনায় পাঠকদের আকৃষ্ট করত প্রধানতঃ ভাষার ইন্দ্রজালে, কৌতুকরসে ও ব্যঙ্গবাণে। ঐ রকম ছোট ছোট টীকা-টিপ্পনীতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পটু। যখন সাপ্তাহিক “বসুমতী”র সম্পাদক ছিলেন, তখন তাঁর লেখা “দশের কথা” সকলেই আগ্রহভরে পাঠ করতেন। অনেক নূতন লেখক তাঁকে যমের মতন ভয় না ক’রে,

১০৫