পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

পারেন নি। বিখ্যাত কবি রজনীকান্ত সেন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধ সমালোচনার ভয়ে নিজের রচনা প্রকাশ করতে রাজি হন নি। পরে সুরেশচন্দ্রের কাছ থেকে মৌখিক অভয় পেয়ে তিনি তাঁর রচনাগুলি পাঠকদের উপহার দেন।

 রামধন মিত্রের লেনে একখানি ছোট দোতলা বাড়ীতে গিয়ে মাঝে মাঝে আমি সুরেশচন্দ্রের সঙ্গে বাক্যালাপ ক’রে আসতুম। আমি তখন সাহিত্যিক হবার জন্যে চেষ্টা করছি বটে, তবে নামডাক বিশেষ কিছুই হয় নি। বয়সও যথেষ্ট কাঁচা। তা সত্ত্বেও সুরেশচন্দ্র আমাকে অবহেলা করেন নি—যদিও বয়সে তিনি আমার চেয়ে আঠারো ঊনিশ বৎসর বড় ছিলেন। ধীরে ধীরে গম্ভীর স্বরে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন।

 প্রথম যেদিন তাঁকে দেখতে যাই, বাড়ীর ভিতরে ঢুকে রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলুম। সুরেশচন্দ্রের বৈঠকখানার পাশের ঘরে চোখ পড়তেই দেখি, একটি আলনার তলায় সারি সারি সাজানো রয়েছে কয়েক জোড়া পাদুকা। মস্ত মস্ত জুতো— এত প্রকাণ্ড যে চোখ চমকে যায়! ভাবলুম, আমি লিলিপুটের মানুষ, এ কোন্ অতিকায় ব্যক্তির বাড়ীতে এসে পড়েছি!

 তারপর স্বচক্ষে সুরেশচন্দ্রকে দেখলুম। তাঁকে অতিকায় বললে অত্যুক্তি হবে না। দস্তুরমত দশাসই চেহারা— যেমন দৈর্ঘ্যে, তেমনি প্রস্থে। গৌর বর্ণ, শ্মশ্রুগুম্ফহীন মুখ। সেই পুরুষোচিত দেহ এবং প্রতিভাব্যঞ্জক মুখ বৃহৎ জনতার ভিতরেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে, দর্শকের মনে জাগায় সম্ভ্রমের ভাব।

 যখন তিনি “বসুমতী”র সম্পাদক তখন একদিন তাঁর বাড়ীতে গিয়ে দেখি, সুরেশচন্দ্র সেই সপ্তাহের কাগজ হাতে ক’রে পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ভীত সাংবাদিককে অত্যন্ত ক্রুদ্ধস্বরে ভর্ৎসনা করছেন।

১০৫