পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সাংবাদিকের অপরাধ, ছোট্ট একটি খবরে ভাষার ভুল। অধিকাংশ সম্পাদকই এই তুচ্ছ ত্রুটি ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করতেন না, কিন্তু সুরেশচন্দ্রের প্রকৃতি ছিল না অধিকাংশ সম্পাদকের মত। খবরের কাগজের টুকরো খবরেও তিনি এতটুকু ভাষার ভুল সইতে পারতেন না। আজকের সাংবাদিকদের যদি তাঁর অধীনে কাজ করতে হ’ত, তাহ’লে অধিকাংশেরই জীবন হয়ে উঠত অতিশয় অতিষ্ঠ।

 কেবল সুরেশচন্দ্রের বাড়ীতে নয়, কবিবর দ্বিজেন্দ্রলাল ও অক্ষয়কুমার বড়ালের ভবনেও মাঝে মাঝে তাঁর দেখা পেতুম। একদিন গিয়ে দেখি, তিনি, অক্ষয়কুমার ও মুনীন্দ্রনাথ ঘোষ ব’সে ব’সে গল্প করছেন। আমাকে দেখে বললেন, ‘হেমেন্দ্রবাবু, আপনাকে কাল মিনার্ভা থিয়েটারের সভায় দেখলুম না?’

 —‘আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনাদের বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলুম।’

 —‘কেমন লাগল?’

 —‘ভালো লাগল খালি আপনার আর হীরেন্দ্রনাথ দত্তের বক্তৃতা। আর সব বক্তৃতাই অশ্রাব্য।’

 সুরেশচন্দ্র হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, বাংলা দেশে রাম-শ্যাম সবাই বক্তা হ’তে চান। কিন্তু ঐ বক্তৃতাগুলি যদি গ্রামোফোনের রেকর্ডে তুলে রাম-শ্যামদের আবার শোনাতে পারা যায়, তাহলে হয়তো তাঁদের কিঞ্চিৎ আক্কেল হ’তে পারে।’

 সুরেশচন্দ্র ছিলেন উচ্চশ্রেণীর বক্তা। তাঁর লেখনীর মত তাঁর মুখ দিয়েও নির্গত হ’ত সুমধুর, প্রসাদগুণপূর্ণ, শুদ্ধ ভাষা। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল গম্ভীর ও উদাত্ত, শ্রবণকে দিত তৃপ্তি।

 এইবার একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা বলি। একদিন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাড়ীর ঘাস-জমির উপরে বৈঠক বসেছে। উপস্থিত আছেন দ্বিজেন্দ্রলাল, সুরেশচন্দ্র, পাঁচকড়ি বন্দোপাধ্যায়,

১০৭