পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাদের দেখেছি

ষোলো-সতেরো বৎসর—ছোট ছোট পত্রিকায় কিছু কিছু লেখা শুরু করেছি এবং সে সময়ে দীনেন্দ্রকুমার বোধ হয় সাপ্তাহিক “বসুমতী”র সম্পাদক কিংবা সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেন।

 দীনেন্দ্রকুমার তখন হাটখোলা অঞ্চলে একটি ছোট রাস্তায় একখানা নোংরা বাড়ীর তিনতলায় বাস করতেন। অন্ধকার ও সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে একটি বন্ধ দরজায় করাঘাত করলুম। মিনিট দুই পরে দরজা খুলে গেল। দেখলুম একটি কৃশ ভদ্রলোককে— মুখ যাঁর সৌম্য ব’লে মনে হ’ল না।

 ‘আপনিই কি দীনেন্দ্রবাবু?’

 শুষ্ক স্বরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, কি দরকার আপনার?’

 নমস্কার ক’রে বললুম, ‘দয়া ক’রে আপনার হাতের একটু লেখা দেবেন?’

 ‘ও সব আমি ভালোবাসি না, ওসব আমি পছন্দ করি না’, ক্রুদ্ধ কণ্ঠে এই বলতে বলতে তিনি রেগে দূরে গিয়ে আমার দিকে একেবারে পিছন ফিরে দাঁড়ালেন। আমি তো হতভম্ব! অর্ধ মিনিটকাল চুপ ক’রে অপ্রস্তুতের মত দাঁড়িয়ে রইলুম। দীনেন্দ্রবাবু আমার দিকে আর একবারও ফিরে তাকালেন না। তখন ‘নমস্কার’ শব্দটি উচ্চারণ ক’রে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি স’রে প’ড়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলুম।

 বহু বৎসর পরে স্বর্গীয় জলধর সেন মহাশয়ের বৈঠকে বসে আবার যখন দীনেন্দ্রবাবুর দেখা পাই, সাহিত্য-জগতে তখন আমি আর অপরিচিত নই। জলধরবাবু তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেবারে তিনি আমার প্রতি আর উপেক্ষা প্রকাশ করলেন না, কিছুক্ষণ ভালোভাবেই আলাপ করলেন। কিন্তু সেবারেও আমার মনে হয়েছিল, তাঁর হাতের লেখা সরস বটে, কিন্তু

১১