পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 তিনি জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন নিশ্চিন্ত আলস্য-বিলাসের মধ্যে পরম আরামে।

 এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন অনেকটা বিলাতী কবি এডওয়ার্ড ফিযজেরাল্ডের মত। যে অসাধারণ শক্তিধর না থাকলে পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম আজ পৃথিবীবিখ্যাত হ’তে পারতেন না, চুয়াত্তর বৎসরব্যাপী সুদীর্ঘ জীবনের মধ্যেও তিনি একখানি ক্ষুদ্র অনুবাদপুস্তিকা ছাড়া আর কোন স্মরণীয় রচনা রেখে গেলেন না! কবিতা রচনার চেয়ে ভালো লাগত তাঁর সাহিত্যিক বন্ধুদের সঙ্গ। তিনি ছিলেন থ্যাকারে ও টেনিসন প্রভৃতির সুহৃদ। ফুল, গান ও কাব্যরসের ভিতর দিয়েই কেটে গিয়েছে তাঁর সারাজীবন।

 সুধীন্দ্রনাথের সাহিত্যচর্চা ছিল স্বার্থহীন। পেটের ধান্ধায় কোনদিন তাঁকে কলম ধরতে হয় নি। দেশের বড় বড় সমস্ত পত্রিকার সম্পাদকই সাগ্রহে তাঁর রচনা প্রকাশ করতেন, কিন্তু জীবনে কারুর কাছ থেকেই তিনি লাভ করেন নি একটিমাত্র কপর্দক। আর এ কথাটাও সত্য, সে যুগের অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকই অর্থের বিনিময়ে কোন পত্রিকায় লেখা দিতেন না। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত রচনার জন্যে প্রণামী পেয়েছেন পরিণত বয়সেই।

 সুধীন্দ্রনাথের মত নির্বিরোধী ও অজাতশত্রু সাহিত্যিক বাংলা দেশে আর কেউ আছেন ব’লে জানি না। আগেই বলেছি তিনি বৈঠকে বৈঠকে বেড়াতে ভালোবাসতেন। তখন সাহিত্যিকদের বিভিন্ন দলের ছিল বিভিন্ন বৈঠক। এক বৈঠকধারীদের সঙ্গে আর এক বৈঠকধারীদের মনের মিল, মতের মিল থাকা স্বাভাবিক নয়। অথচ এইসব পরস্পরবিরোধী বৈঠকে গিয়ে সুধীন্দ্রনাথ অনায়াসে মেলামেশা করতেন এবং সব দলই তাঁকে গ্রহণ করত নিজেদেরই একজনের মত।

১৩২