পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 আমি যখন তাঁর সঙ্গে প্রথমে পরিচিত হই, তখন আমার বয়স সতেরো-আঠারোর বেশী হবে না। বলা বাহুল্য, বয়সে আমি তাঁর চেয়ে ছিলুম ঢের ছোট, তবু প্রথম থেকেই তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন পুরাতন বন্ধুর মত। হয় তাঁর বাড়ীতে, নয় কোন বৈঠকে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হ’ত প্রায় প্রতিদিনই। অনেক দিন তিনি নিজেই আমার বাড়ীতে এসে দেখা করতেন। ঠাকুর-গোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর চেয়ে মিশুক ও নিরভিমান মানুষ আমি আর দেখি নি। সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের নিয়ে তাঁর সঙ্গে যখন আলোচনা হ’ত তখন তিনি এমন সাবধানে কথা কইতেন যে, কিছুতেই আন্দাজ করা যেত না, তাঁর আসল নিজস্ব মতামত কি। দলাদলির ভিতরে জড়িয়ে পড়তে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নারাজ। তাঁর মুখে কখনো কারুর নিন্দা শুনি নি। কখনো তাঁকে রাগ করতে বা বিরক্ত হ’তেও দেখি নি। কোন প্রসঙ্গ তাঁর মনের মত না হলে তিনি একেবারেই গম্ভীর হয়ে যেতেন।

 কারুর মনেই তিনি সাধ্যমত ব্যথা দিতে চাইতেন না। তিনি কোন নতুন লেখায় হাত দেন না কেন জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, ‘লিখতে আমার ভয় হয় হেমেন্দ্রবাবু!’

 —‘সে কি সুধীনবাবু!’

 —‘লেখা শুরু করলে একসঙ্গে দশ-বারোটা গল্প লিখতে হবে।’

 —‘কেন?’

 —‘দশ-বারোজন সম্পাদকের কাছে অঙ্গীকার করেছি, নতুন গল্প লিখলেই তাঁকে দেব। তাই মাথায় লেখার প্লট এলেও হাত গুটিয়ে ব’সে থাকি। একজন সম্পাদককে একটা গল্প দিলে কি আর রক্ষা আছে? অমনি বাকি সবাই এসে একসঙ্গে আমাকে আক্রমণ করবেন।’

১৩৩