পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 এ-রকম অদ্ভুত কারণে লেখায় ইস্তফা দিয়েছেন, এমন আর কোন সাহিত্যিকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় নি।

 কিছুকাল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর খুব দহরম-মহরম হয়েছিল। দু’জনকে উঠতে-বসতে চলতে-ফিরতে সর্বদাই দেখা যেত একসঙ্গে। এমন দু’জন বিরুদ্ধ-প্রকৃতি মানুষের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠতা হ’ল কেমন ক’রে, অবাক হয়ে তাই ভাবতুম। একজনের স্বভাব উগ্র, আর একজন পরম শান্ত। একজন মুখর, আর একজন সংযতবাক। একজন অতি চঞ্চল, আর একজন ধীর-স্থির। একজন জোর গলায় নিজের মতামত ব্যক্ত করেন, আর একজন নিজের মতামত কাকপক্ষীকেও টের পেতে দেন না।

 একদিন দেখি পথ দিয়ে চলেছেন সুধীন্দ্রনাথ, হাতে তাঁর খাবারের ঠোঙা। তখনও পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ীর কারুর হাতে খাবারের ঠোঙা দেখি নি। বিস্মিত হয়ে সুধলুম, ‘আপনার হাতে খাবারের ঠোঙা?’

 হাসিমুখে তিনি বললেন, ‘দোকান থেকে আলুরদম কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’

 —‘কেন, আপনার বাড়ীতে কি আলুরদম হয় না?’

 —‘হয়, কিন্তু দোকানের মত স্বাদ হয় না।’

 —‘স্বাদ না হবার কারণ কি?’

 —‘বাড়ীর আলুরদমে তো রাস্তার ধূলো পড়ে না!’

 গড়ের মাঠের কখনো ফুটবল খেলা দেখেন নি ব’লে একদিন তাঁকে মোহনবাগানের খেলা দেখাবার জন্যে জোর ক’রে ধ’রে নিয়ে গিয়েছিলুম।

 তি।ন বিপুল বিস্ময়ে ব’লে উঠলেন, ‘একি, এরা খালি পায়ে ফুটবল খেলে!’

১৩৪