পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

পরে গিরিশচন্দ্র যখন পরলোক গমন করেন তারপর থেকে দানীবাবু অভিনয়ে আর কোন নূতনত্ব প্রকাশ করতে পারেন নি। “স্টক ইন ট্রেড” থেকে পুরাণো কৌশলগুলিই বারংবার ব্যবহার ক’রে ক’রে হাততালি কুড়িয়ে গিয়েছেন। আর গিরিশ-অর্ধেন্দুর মৃত্যুর পরেও তারাসুন্দরী এমন সব নব নব সৃষ্টিক্ষমতার পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন যে, বেশ বোঝা যেত, তিনি নির্ভর করতেন স্বকীয় মস্তিষ্কের উপরেই।

 তারাসুন্দরীর সমসাময়িক অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন তিনকড়ি দাসী; তিনি তারাসুন্দরীর চেয়ে দেখতেও সুশ্রী ছিলেন এবং তাঁর গানের গলাও ছিল চমৎকার। কিন্তু তিনি যখন প্রথম রঙ্গালয়ে দেখা দেন তখন ছিলেন নিরক্ষরা। তবু কেবল গিরিশচন্দ্রের বিচিত্র শিক্ষার গুণেই তিনকড়ি রীতিমত কঠিন কঠিন ভূমিকায় আশ্চর্য অভিনয়-চাতুর্যের পরিচয় দিতে পারতেন। তিনকড়ি দ্বারা অভিনীত “জনা”র ভূমিকাটি এতদূর প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল যে, তাঁর জীবদ্দশায় অনুরুদ্ধ হয়েও তারাসুন্দরী পর্যন্ত তা গ্রহণ করতে সাহসী হন নি।

 কিন্তু বহুকাল পরে তারাসুন্দরী যখন প্রাচীনা, নাট্যাচার্য শিশিরকুমারের অনুরোধে “জনা”র ভূমিকাটি গ্রহণ করেন। শিশিরকুমার তাঁকে শিক্ষা দেন নি, নিজের ধারণার দ্বারাই এই ভূমিকাটি তিনি প্রস্তুত করেছিলেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অনায়াসেই। তিনকড়ির “জনা” দেখেছিলুম আমি বার তিনেক। কিন্তু তারাসুন্দরীর “জনা” হয়েছিল অধিকতর সূক্ষ্ম ও ভাবগভীর। সেই সময়ে আর একটি বিষয়ও লক্ষ্য করেছিলুম। বাংলা নাট্যজগতে নবযুগ আসবার পর এখানে অভিনয়ের যে নূতন ধারা প্রবর্তিত হয়, পুরাতন যুগের বড় বড় অভিনেতারাও তার

১৪০