পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

সঙ্গে নিজেদের খাপ্ খাইয়ে নিতে পারতেন না, তাই নূতনদের তুলনায় তাঁরা যথেষ্ট ম্লান হয়েই পড়তেন। কিন্তু তারাসুন্দরীর মনীষা তাঁর মহিমাকে কোথাও ক্ষুণ্ণ হ’তে দেয় নি, নূতনদের সঙ্গে মিলে-মিশেই নিজের ভূমিকার প্রাধান্য তিনি আগাগোড়া বজায় রাখতে পেরেছিলেন।

 আয়েসা ও রিজিয়ার ভূমিকায় তারাসুন্দরীকে যিনি দেখেন নি তিনি জীবনের একটি প্রধান উপভোগ্য সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন। “চন্দ্রশেখর” পালায় কেবল প্রেমিকা শৈবলিনী রূপে নয়, উন্মাদিনী রূপেও তিনি অদ্ভুত অভিনয় করতেন, তারও স্মৃতি কোনদিনই ভুলতে পারব না। “অযোধ্যার বেগমে”ও তিনি নিখুঁত কৌশলে ফুটিয়ে তুলতেন এক অত্যাচারিতা, মহিয়সী মহিলার ছবি। অনূদিত “ওথেলো” নাটকে ডেসডিমোনার ভূমিকায় তিনি বৃদ্ধ বয়সেও লীলাময়ী নব-যৌবনীর মত যে চমৎকার অভিনয় করতেন, তাও ভোলবার কথা নয়।

 কিন্তু আর একটি অল্পখ্যাত ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দেখে আমরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলুম। ইবসেনের “দি ভাইকিংস অ্যাট হেলগেল্যাণ্ড” অবলম্বন ক’রে অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় “রাখীবন্ধন” নামে একখানি নাটক রচনা করেছিলেন এবং ১৯২০ খৃষ্টাব্দে স্টার থিয়েটারে তা অভিনীত হয়। এই পালাটির প্রধান নারী ভূমিকা হচ্ছে, ধারা। উক্ত ভূমিকায় তারাসুন্দরীর যে সংযত, স্বাভাবিক ও ভাবাত্মক অভিনয় দেখেছি, তা বর্ণনা করবার ভাষা আমার নেই। অমর বিলাতী অভিনেত্রী এলেন টেরিও ঐ ভূমিকায় অভিনয় করতেন। কিন্তু তারাসুন্দরীর অভিনয় যে তাঁর চেয়ে নিরেস হয়েছিল, এমন সন্দেহ আমার হয় না। “রাখীবন্ধনে” চন্দ্রাবতের ভূমিকায় তারক পালিতের চিত্তাকর্ষক অভিনয়ও আমার

১৪১