পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

এমনি মিষ্ট প্রাঞ্জলতা ও আন্তরিকতা আছে, প্রত্যেক পাঠককেই যা আকৃষ্ট না ক’রে পারে না।

 প্রথম জীবনটা দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ ক’রে পরে তিনি যশ, অর্থ ও রাজসম্মান প্রভৃতি মানুষের যা-কিছু কাম্য, সমস্তই লাভ করেছিলেন, অধিকাংশ সাহিত্য-সেবকেরই এতটা সৌভাগ্য হয় না। কিন্তু সুখের দিনেও তাঁর স্বভাবের মাধুর্য ছিল সম্পূর্ণরূপে অপরিবর্তিত।

 তাঁর সঙ্গে যেদিন প্রথম পরিচিত হই, আমি তখন একজন অখ্যাত লেখক মাত্র, ছোট ছোট মাসিক কাগজে এবং মাঝে মাঝে দৈনিক “সন্ধ্যা”য় হাতমক্স করি। একখানি মাসিক পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলুম, তারই জন্যে দীনেশচন্দ্রের কাছে গিয়েছিলুম একটি রচনা-ভিক্ষা করতে। আমার বয়স তখন সতেরো কি আঠারো, দীনেশচন্দ্রের একচল্লিশ কি বিয়াল্লিশ। তিনি তখন তাঁর কাঁটাপুকুরের বাড়ীতে বাস করতেন (শুনেছি সে বাড়ীখানি নাকি গুণগ্রাহী শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দান)।

 দীনেশচন্দ্র নীচে নেমে এলেন। তাঁর রংটি কালো বটে, কিন্তু প্রশান্ত প্রসন্ন মুখ। চোখে হাসি, ওষ্ঠাধরে হাসি। এমন স্নেহভরে আমার কাঁধে হাত দিয়ে কথা কইতে লাগলেন, যেন তিনি আমার সমবয়সী পুরাতন বন্ধু।

 “সাধনা-সমিতি” নামে আমাদের একটি আলোচনা-সভা ছিল— সেখানে আমরা কয়েকজন উদীয়মান সাহিত্যিক স্বরচিত প্রবন্ধাদি পাঠ করতুম এবং আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়দীনেশচন্দ্র সেন প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ ক’রে আনতুম; তাঁরা বক্তৃতা দিতেন। সেক্সপিয়ারের ট্রাজেডির সঙ্গে সংস্কৃত নাটকের পার্থক্য কি তা দেখিয়ে দীনেশচন্দ্র একটি চমৎকার বক্তৃতা দিয়েছিলেন।

 তারও অনেক বৎসর পরে সুকিয়া স্ট্রীটে “ভারতী” কার্যালয়ের

১৪৪