পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

তিনতলায় বসত আমাদের বৃহৎ বৈঠক। বাংলা দেশের প্রবীণ ও নবীন অধিকাংশ বিখ্যাত লেখক ছিলেন সেখানকার সভ্য। প্রতিদিন বৈকাল থেকে রাত্রি নয়টা পর্যন্ত সে বৈঠক গম্‌গম্ করত বহু সাহিত্যিকের আনাগোনায়, সাহিত্য-আলোচনায়, তর্ক-বিতর্কে এমন কি মাঝে-মাঝে সমস্বরে রবীন্দ্র-সঙ্গীতেও। সেইখানেই দীনেশচন্দ্রকে আমাদের প্রাণের আরো কাছাকাছি পাই। “ভারতী”র সেই বৈঠকে আসতেন প্রমথ চৌধুরী, যাঁর করধৃত সিগারেটের আগুন ছিল রাবণের চিতার ক্ষুদ্রতর সংস্করণের মত সদা-জ্বলন্ত; আসতেন ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র, যিনি গল্প করতে করতে লজেঞ্জুসের মত চুষে চুষে উপভোগ করতেন আফিমের বড় বড় গুলি বা গোলা! আসতেন দীনেশচন্দ্র, তাঁর একমাত্র নেশা চা। আসতেন আরো অনেক দেশবিখ্যাত হোমরাচোমরা ব্যক্তি, তাঁদের কথা বলব পরে যথাসময়ে। প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র ও দীনেশচন্দ্র, এঁরা তিনজনেই ছিলেন গল্পিয়া। কিন্তু প্রথম চৌধুরী বলতেন কেবল সাহিত্যের গল্প; আর দীনেশচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের মুখে শুনতুম আমরা যত রাজ্যের গালগল্প।

 বলেছি, দীনেশচন্দ্রের একমাত্র নেশা ছিল চা। কিন্তু সে যা তা চা নয়— একেবারে স্পেশ্যাল চা, “ভারতী”-বৈঠকের ‘ইলেকট্রিক কেট্‌লি’তে সে চায়ের জল গরম হ’ত বটে, কিন্তু তার উপাদান ছিল অদ্ভুত। সাধারণতঃ চা তৈরি ক’রে বন্ধুদের মধ্যে পরিবেশনের ভার গ্রহণ করতুম আমি নিজে। দীনেশচন্দ্রের বাঁধা নির্দেশ ছিল, চায়ে কয় চামচ চিনি দিতে হবে তা ব’লে দেবেন তিনিই।

 আমি বলতুম, ‘দীনেশবাবু, পেয়ালায় তিন চামচ চিনি দিলুম।’

 —‘আরো চিনি দিন।’

 —‘চার চামচ, পাঁচ চামচ।’

১৪৫