পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 দীনেশচন্দ্র তখন বেহালায় নিজের নতুন বাড়ীতে গিয়ে বাস করছেন। একদিন সেখানে হ’ল আমাদের নিমন্ত্রণ। আমরা মানে স্বর্গীয় কবিবর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, স্বর্গীয় “ভারতী”-সম্পাদক ও গল্পলেখক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী ও আমি। দীনেশচন্দ্র নিজেও যেমন ভোজনবিলাসী ছিলেন, বন্ধুবান্ধবদের আদর ক’রে খাওয়াতেও তেমনি ভালোবাসতেন। দুপুরবেলায় দেখি আমাদের জঠর জ্বালা নিবারণের জন্য হয়েছে অপরিমিত আহার্যের আয়োজন। নিজে একসঙ্গে পাত পেতে দীনেশচন্দ্র সকলের উপর রাখলেন শ্যেনদৃষ্টি এবং বারংবার বলতে লাগলেন, এটা খাও, ওটা খাও— পাতে কিছু ফেলে রাখা চলবে না। পূর্ণোদরেও হাত গুটোবার উপায় নেই— ‘আরো কিছু নিতেই হবে।’ অনিচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর অকাট্য যুক্তি ছিল— ‘নইলে আমার স্ত্রী রাগ করবেন!’

 কানায় কানায় পেট ভরিয়ে ওজনে রীতিমত ভারি হ’য়ে সকলে বাগানের পুকুড়-পাড়ে ঘাসজমির উপরে এসে বসলুম। দীনেশচন্দ্র স্বরচিত একটি নূতন পৌরাণিক আখ্যায়িকা পাঠ ক’রে শোনালেন। প্রায় একটি গোটা দিন চমৎকার ভাবে কাটিয়ে সন্ধ্যার আগে যখন বিদায় নিচ্ছি, দীনেশচন্দ্র বললেন, ‘দেখছেন তো আমি পরম সুখে আছি। সহরের কোন উপসর্গ নেই, নিরিবিলি ঠাঁই, সবুজ বাগান, ফুলের বাহার, পাখীর গান, ঢলঢলে সরোবর— আপনারাও বেহালায় এসে বাসা বাঁধুন না!’

 মণিলাল বললেন, ‘সবই তো ভালো, তবে ঐ যা ম্যালেরিয়ার ভয়।’

 দীনেশচন্দ্র যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘বেহালার মত জায়গা আর নেই। বেহালায় ম্যালেরিয়া? অসম্ভব!’

১৪৭