পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

 —‘আরো দিন, আরো দিয়ে যান।’

 —‘ছ চামচ, সাত চামচ হ’ল।’

 —‘আরো দিয়ে যান, আরো।’

 —‘বলেন কি দীনেশবাবু, আপনি চা খাবেন, না চিনি খাবেন?’

 —‘চিনি খাব ভাই, চিনি খাব। চিনি খাব ব’লেই তো চা খাই। আরো চিনি চাই।’

 পেয়ালায় আট-দশ চামচ চিনি না পড়লে দীনেশচন্দ্রের মন উঠত না। আরো বেশী চিনি দিলেও তিনি বোধ হয় বলতেন, ‘অধিকন্তু ন দোষায়’।

 চা এবং চিনিকে যথাস্থানে প্রেরণ ক’রে চাঙ্গা হয়ে ইজি-চেয়ারে ব’সে দীনেশচন্দ্র শুরু করতেন গল্পের পর গল্প। এত রকম গল্প তিনি জানতেন আর এত ভালো ক’রে বলতে পারতেন! ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোথা দিয়ে যে কেটে যেত, খেয়াল করতেই পারতুম না। তারপর তিনি থাকতে থাকতে যে-দিন গালগল্পের আর এক রাজা শরৎচন্দ্র এসে পড়তেন, সেদিন তো হ’ত যাকে বলে ‘সোনায় সোহাগ।’! এঁর মুখ বন্ধ হ’তে না হ’তে মুখর হয়ে উঠত আর এক জনের মুখ! দস্তুরমত গল্প-প্রতিযোগিতা! মাঝে মাঝে শরৎচন্দ্র বাক্যবাণের দ্বারা দীনেশচন্দ্রকে বিদ্ধ করবার চেষ্টা করতেন। দীনেশচন্দ্র কথাপ্রসঙ্গে প্রায়ই বিশেষ ঝোঁক দিয়ে ‘my wife’ ব’লে নিজের সহধর্মিণীর কথা তুলতেন। একদিন শরৎচন্দ্র বললেন, ‘দীনেশবাবু যে রকম দৃঢ়কণ্ঠে ‘my wife’ ব’লে চেঁচিয়ে ওঠেন, তাতে ক’রে বেশ বোঝা যায় যে তাঁর স্ত্রীর উপর একমাত্র তিনি ছাড়া পৃথিবীর আর কারও একটুখানিও দাবি-দাওয়া নেই!’ সবাই উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠলেন এবং দীনেশচন্দ্রও কোনরকম অপ্রস্তুত না হয়ে সকলের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে হাসতে লাগলেন।

১৪৬