পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

স্মরণ”অক্ষয়কুমার বড়ালের “এষা” প্রভৃতি কাব্যপুঁথি পত্নীবিয়োগেরই ফল। এখানে প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা মনে পড়ছে। অক্ষয়কুমার যখন “এষা” রচনায় নিযুক্ত, তখন একদিন আমাকে বললেন, ‘দেখ হেমেন্দ্র, কবি টেনিসনের মন যে মানুষের মত মরমী ছিল “ইন্‌ মেমোরিয়াম” (বন্ধুবিয়োগে রচিত) পাঠ করলে তা বুঝতে বিলম্ব হয় না। কিন্তু রবিবাবুর মন বড় কঠিন, আত্মীয়বিয়োগেও তিনি ব্যথা পান না।’

 আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘এ কথা কেন বলছেন?’

 —‘স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি যে ব্যথা পেয়েছেন, তাঁর কাব্যের ভিতরে এমন প্রমাণ নেই।’

 আমি “স্মরণ” কবিতাগুচ্ছের উল্লেখ করলুম।

 তিনি বললেন, ‘টেনিসনের “ইন্‌ মেমোরিয়ামে”র কাছে “স্মরণ” উল্লেখযোগ্যই নয়। একখানা চটি বই— অকিঞ্চিৎকর।’

 আমি বললুম, ‘হাটের মাঝে ভালো ক’রে শোক জাহির করবার জন্যে মস্ত মস্ত শোককাব্য রচনা করতে হবে, এমন কোন কথা নেই। “স্মরণে”র মধ্যে সাতাশটি মর্মস্পর্শী কবিতা আছে। “নৈবেদ্যে”র মধ্যেও রবীন্দ্রনাথের ঐ শ্রেণীর আরো কবিতা আছে। তাই-ই যথেষ্ট নয় কি?’

 অক্ষয়কুমার জবাব দিলেন না। মুখ দেখে বুঝলুম, অসন্তুষ্ট হলেন। পরেও তাঁর মুখে ঐরকম কথা শুনেছি।

 যাক্, যা বলছিলুম। পত্নীবিয়োগের পর শোককাতর হয়ে চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় “উদ্ভ্রান্ত প্রেম” রচনা ক’রে বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত হয়েছিলেন। জলধরবাবুর সব চেয়ে বিখ্যাত পুস্তক হচ্ছে “হিমালয়”। তাও মুখ্য ভাবে না হোক্, গৌণ ভাবেই পত্নীবিয়োগেরই ফল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মনে বৈরাগ্যের উদয়

১৫৮